চট্টগ্রামের হানিফ পরিবহন সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন ও হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল ইসলামের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এছাড়া ‘হানিফ’ ট্রেডমার্ক ব্যবহার নিয়ে আদালতের জাল ও ভুয়া আদেশ তৈরির ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার-সহ সংশ্লিষ্টদের সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবরে ওই প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য্য রেখেছেন আদালত। ‘হানিফ’ ট্রেডমার্ক ব্যবহার নিয়ে আদালতের জাল ও ভুয়া আদেশ তৈরির ঘটনার বিষয়টি নজরে আসার পর গত ১৪ নভেম্বর হানিফ পরিবহনের ট্রেডমার্কের দুই দাবিদারসহ কয়েকজনকে তলব করা হয়। সে অনুসারে তারা আদালতে হাজির হন।
আদালতে চট্টগ্রামের হানিফ পরিবহন সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন ও আইনজীবী ইকরাম উদ্দিনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল ইসলামের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী বজলুর রশীদ।
পরে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল জানান, আদালত ভুয়া আদেশ তৈরি নিয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এ তদন্ত প্রতিবেদন ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে দিতে বলেছেন। আর ৮ ডিসেম্বর এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন। এছাড়া এ বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামে হানিফ পরিবহনের নাম নিয়ে দুই দাবিদারের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
ভুয়া আদেশে দেখা যায়, বাদী চট্টগ্রামের কোতোয়ালির রিয়াজ উদ্দিন বাজারের হানিফ পরিবহন সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। বিবাদী হিসেবে দেখানো হয়েছে চট্টগ্রামের নিউ আমানত শপিং সেন্টারের হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল ইসলামসহ ৭ জনকে।
বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ উল্লেখ করে গত ২৩ অক্টোবরের একটি জাল আদেশ তৈরি করা হয়। ওই জাল আদেশে রিট আবেদনের নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে ১৫৩২১/২০২২। রিট আবেদনকারী হলেন- হানিফ পরিবহন সার্ভিস লিমিটেড।
আর এতে বিবাদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- বাণিজ্য সচিব, শিল্প সচিব, প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার, ডেপুটি রেজিস্ট্রার, যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার এবং হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি আনিসুল ইসলামকে।
আদেশে ওই বেঞ্চের আইন কর্মকর্তা হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা এখন আর আইন কর্মকর্তা নেই। এছাড়া আদেশে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতির নামের বানানও ভুল লেখা হয়েছে।
জাল আদেশে বলা হয়েছে, হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেড যেন ‘হানিফ’ ট্রেডমার্ক ব্যবহার করতে না পারে সেই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। গত ১৬ অক্টোবর হানিফ পরিবহন সার্ভিস লিমিটেডের করা আবেদনটি ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে জাল আদেশে।
জাল আদেশের একটি ফটোকপি ওই বেঞ্চে দায়িত্ব পালনকারী আইন কর্মকর্তা (ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল) শেখ সাইফুজ্জামানের কাছে আসে। এরপরই তিনি তা বেঞ্চের নজরে আনেন। এ বিষয়ে ১৪ নভেম্বর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান জামান সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের এই বেঞ্চের মোশন পাওয়ার ছিল না। শুধু রুল শুনানির এখতিয়ার আছে। এ ধরনের আদেশ দিতে হলে মোশন শুনানির এখতিয়ার থাকতে হয়। তিনি আরও বলেন, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কোনো চক্র এই আদেশটি তৈরি করেছে।