রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তহবিল নিয়ে ‘সংকট’ হতে পারে বলে মনে করেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। বুধবার (২৫ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন শঙ্কার কথা প্রকাশ করেন তিনি।
হাইকমিশনার বলেন, আফগানিস্তান ও ইউক্রেন সংকটের মধ্যে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের প্রতি যেন বিশ্বের মনোযোগ হারিয়ে না যায়। রোহিঙ্গা সংকটের দিকে যেন বিশ্বের মনোযোগ বজায় থাকে। আর এ কারণেই আমি বাংলাদেশ সফরে এসেছি।
ভারত থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে ফিলিপ্পো বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত। হাজারের মতো রোহিঙ্গা ভারত থেকে এসেছে। বাংলাদেশ সরকারের মতো আমরা ভারতকে অনুরোধ করতে চাই যে, ইতোমধ্যে এখানে প্রচুর রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। আরও রোহিঙ্গা পাঠিয়ে বাংলাদেশের ওপর বাড়তি চাপ দেবেন না।
হাইকমিশনার বলেন, মালয়েশিয়ায় ২ লাখ, ভারতে ৪০ হাজার এবং ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের উচিত নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের ভালোভাবে দেখভাল করা। আরও রোহিঙ্গা পাঠিয়ে বাংলাদেশকে যেন অতিরিক্ত চাপ দেওয়া না হয়। এ বার্তা আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোতে পৌঁছে দেব।
আসিয়ান দেশগুলোকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার। তিনি বলেন, মিয়ানমার আসিয়ান সদস্য। আসিয়ান দেশগুলোও রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের প্রতি আহ্বান জানাব, তারা যেন এ সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখে।
প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে জাতিসংঘের আলোচনার বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে হাইকমিশনার বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। তবে বেশ স্বল্প পরিসরে। মিয়ানমারের সঙ্গে করা সমঝোতাটির মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। আমারা এটিকে বাড়াতে চাই। আর এ বিষয়ে মিয়ানমার সম্মতি দিয়েছে। তবে আমরা আমাদের আলোচনার পরিধি বাড়াতে চাই। যাতে পরিস্থিতির সমাধান করা যায়।
মিয়ানমারেই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান রয়েছে উল্লেখ করে শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, এ সংকটের সমাধান মিয়ানমারেই। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপি মিয়ানমারের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় একটি সমঝোতার মাধ্যমে রাখাইনে কমিউনিটি প্রজেক্টগুলোতে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে সুষ্ঠু, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে আরও সাহায্য প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সফরে এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে হওয়া আলাপের প্রসঙ্গে টেনে ফিলিপ্পো বলেন, যতজন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি, তারা সবাই পরিস্থিতি অনুকূল হলেই তাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা আমাকে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুতির মূল কারণ নিয়ে বিশ্বকে কাজ করতে হবে। তাদের নিজ দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে।
হাইকমিশনার বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় জনগোষ্ঠী যে সংকট মোকাবিলা করছে, তা বিশ্বকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে। শরণার্থীদের জীবন নির্ভর করে তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আচরণের ওপর।
ভাসানচর নিয়ে দাতা সংস্থাদের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাসানচরে সহায়তার জন্য দাতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এটি যাতে টেকসই হয়, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা চেয়েছেন। এমন স্থানে তারা অর্থ দেবে না, যা টেকসই নয়। কারণ সে দেশের সরকারকে এ বিষয়ে দূতাবাসগুলোর জবাবদিহি করতে হবে।
পাঁচদিনের সফরে শনিবার ঢাকায় আসেন শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার। সফরে কক্সবাজার ক্যাম্প ও ভাসানচর পরিদর্শন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ফিলিপ্পো।