আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে স্কুলের সব পরীক্ষা শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেজন্য রাজধানীসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে চলছে বার্ষিক পরীক্ষা কিংবা মূল্যায়নের কার্যক্রম। এর মধ্যে আবার গত ২৯ অক্টোবর থেকে চলছে হরতাল-অবরোধ। হরতাল-অবরোধে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও বাস-ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। সে কারণে ছুটির দিনে এবং কর্মসূচির বিরতির দিনে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। সেটি সম্ভব না হলে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিও তুলেছেন তারা। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এখন অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে, বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোর হরতাল-অবরোধে দিশেহারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরাও। তারা বলছেন, হরতাল-অবরোধে শিক্ষার্থীদের স্কুলে না আসার অপশন থাকলেও পরীক্ষার ক্ষেত্রে তা করা কঠিন। বাধ্য হয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ছুটির দিন শুক্র-শনিবার এবং হরতাল-অবরোধের বিরতির দিন মঙ্গলবার পরীক্ষা নিচ্ছে। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান হরতাল-অবরোধেও মধ্যে পরীক্ষা নিচ্ছে।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে স্কুলগুলোকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা শেষ করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতে চায় তা নিতে পারে। এজন্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের কোনো নিষেধ নেই। তবে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর বেলাল হোসাইন বলেন, নির্বাচনের বছর হওয়ায় একটু আগেভাগেই পরীক্ষা শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। এজন্য নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এদিকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে হরতাল-অবরোধও চলছে। তাই অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হরতাল-অবরোধের ফাঁকে ছুটির দিনে পরীক্ষা নিচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের আলাদা কোনো নির্দেশনা নেই। কিন্তু অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই।
অভিভাবকরা বলছেন, গত ২৮ অক্টোবরের পর হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি-ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় অবস্থিত উদয়ন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বাবা হাজী মো. শাহজাহান বলেন, বাচ্চাদের পরীক্ষার জন্য হলেও ১৫দিন রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত রাখা উচিত। আমার ছেলে নিজে স্কুলে আসতে পারলেও হরতাল-অবরোধের কারণে তাকে এখন একা পাঠাই না। অফিস রেখে তাকে স্কুলে নিয়ে আসতে হচ্ছে। পরীক্ষা শেষ করে তাকে বাসায় দিয়ে তারপর অফিসে যেতে হবে। বছরের শেষে এ ধরনের কর্মসূচি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী রুবাবা দৌলার বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, হরতাল-অবরোধে মধ্যে স্কুলে পরীক্ষা চলছে। কিন্তু বাচ্চারা কীভাবে আসবে সেই চিন্তা না করছে সরকার, বিরোধী দল বা স্কুল কর্তৃপক্ষ। কারণ তাদের সন্তান পড়াশোনা করে বিদেশে। আর দেশে পড়লেও তারা নিরাপত্তা নিয়েই স্কুলে আসে। কিন্তু যত কষ্ট হয় আমাদের। হরতাল-অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা না নিয়ে মঙ্গলবার, শুক্র ও শনিবার নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বিরোধী দলগুলোর এসব কর্মসূচির মধ্যেই রাজধানীর স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। ছুটির দিনগুলোতে সুযোগ বুঝে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আজ (রোববার) থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়ন পরীক্ষা শুরু হবে।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে হবে। এজন্য শুক্র, শনি ও মঙ্গলবার তিনদিন পরীক্ষা নেওয়ার হচ্ছে। তবে যেসব ক্লাসে বিষয় বেশি সেসব ক্লাসে অন্যান্য দিনেও পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের বলা হয়েছে যে, আপনার সন্তানকে সাবধানে স্কুলে নিয়ে আসবেন।
ভিকারুননিসা স্কুলে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, পরীক্ষা চলাকালে যাতে সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি না দেওয়া হয়, সেজন্য গতকাল (শনিবার) রাজধানীতে মানববন্ধন করে উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছি। সন্তানরা যাতে নির্ভয়ে ও স্বাচ্ছন্দ্যে স্কুলে আসতে পারে, আনন্দের সাথে বার্ষিক মূল্যায়নে অংশ নিতে পারে সেই দাবি জানিয়েছি। তাছাড়া আনন্দের পরীক্ষা যেন বিষাদে পরিণত না হয় সেই দাবি জানিয়েছি।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, স্কুলগুলো পড়েছে ঝামেলায়। একদিকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে হবে, অন্যদিকে সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দাবি হলো রাজনৈতিক দলগুলোকে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করতে হবে। কিন্তু তারা করছে না। আমরা চাই কোনো কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যেন রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার না হয়। কিন্তু গত ১৫ দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আমরা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন।
তার দাবি, যেসব শিক্ষার্থী হরতাল-অবরোধে স্কুলে আসতে পারছে না, তাদের অনুপস্থিত দেখানো যাবে না। বরং ক্লাসে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করাতে হবে।