পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে ফোনে আড়িপাতার খবর প্রকাশের পর ডিভাইসের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যবহারকারীরা খুবই উদ্বিগ্ন। তাই চাহিদা বাড়ছে নিরাপদ যোগাযোগ প্রযুক্তির। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে সুইজারল্যান্ডের এআরএমএ ইন্সট্রুমেন্টস নামের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সুরক্ষিত যোগাযোগ ডিভাইস তৈরি করছে। স্মার্টফোনের সম্ভাব্য নিরাপত্তা দুর্বলতা নিয়ে মানুষকে সতর্ক করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী পিম ডোনকার্স। তিনি বলেন, ‘মানুষ বুঝতে পারে না যে, নিরাপত্তা এবং স্মার্টফোন কখনো একসঙ্গে চলতে পারে না। ’
পিম ডোনকার্স স্মার্টফোনকে একটি মৌমাছির সঙ্গে তুলনা করেন, যেখানে ‘তৃতীয় পক্ষ ভেতরে এবং বাইরে উড়ে যায়, বাণিজ্য করে এবং ডেটা যে সমস্ত সেন্সরের মাধ্যমে সংগ্রহ করে অপব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, ‘যেকোনো নিরাপদ যোগাযোগের জন্য একটি স্মার্টফোন কখনোই উপযুক্ত নয়। এটা কখনই পুরোপুরি নিরাপত্তা দিতে পারবে না। ’স্মার্টফোনের গোপনীয়তার ত্রুটিগুলো সম্পর্কে তার এই উদ্বেগ সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে খবরের শিরোনাম হয়েছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের এনএসও গ্রুপের পণ্য পেগাসাস নামের পরিচিত গুপ্তচর সফটওয়্যার সম্পর্কে খবর প্রকাশ করার পর।
জুলাইয়ে, জানা যায়, পেগাসাস আইফোন এবং অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে নিজে থেকে ইনস্টল হয়ে যেতে পারে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের বার্তা, ফটো এবং ই-মেইল, রেকর্ড কল এবং এমনকি গোপনে মাইক্রোফোন এবং ক্যামেরা সক্রিয় করতে সক্ষম। একটি ফোন দূর থেকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ক্ষমতা এক সময় বিবেচনা করা হয়েছিল কেবলমাত্র কয়েকটি দেশই করতে পারে। কিন্তু প্রযুক্তি খুব দ্রুত অগ্রসর হয়েছে এবং উচ্চ পর্যায়ের গুপ্তচরবৃত্তি এবং নজরদারি ক্ষমতা এখন অনেক দেশের হাতে চলে গেছে, এমনকি ব্যক্তি এবং নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীও তা করতে সক্ষম।
এই ধরনের উদ্বেগের কারণে নিরাপত্তা প্রযুক্তির বিষয়ে গ্রাহকদের আগ্রহ বেড়েছে। গোপনীয়তা রক্ষায় এনক্রিপ্ট করা স্মার্টফোন থেকে শুরু করে অনলাইন সার্চ ইঞ্জিন এবং মানচিত্রের চাহিদাও বেড়েছে। গোপনীয়তা সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোবাইল ডিভাইসগুলোর গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হওয়ায় অনেকে ব্যবহারকারী ঝামেলায় পড়েছেন। পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৭২ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন যে, তারা তাদের ফোন ব্যবহার করার সময় যা করেন তা বিজ্ঞাপনদাতারা, প্রযুক্তি সংস্থা বা অন্য কোম্পানি ট্র্যাক করছে।
পিউ দ্বারা জরিপ করা প্রায় অর্ধেক মানুষ বলেছিলেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, তাদের বেশিরভাগ অনলাইন কার্যক্রম সরকার ট্র্যাক করে। ডেটা গোপন রাখার জন্য নিরাপত্তা ক্যামেরা তৈরি করে আইওটেক্স। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা উন্নয়ক বিষয়ক বিভাগের প্রধান ল্যারি পাং বলেন, ‘আমরা সবাই তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন, হ্যাক এবং অন্য অনুপ্রবেশ নিয়ে আতঙ্কে আছি। আমরা ক্রমাগত শিখছি, করপোরেশন এবং সরকার আমাদের গোপনীয়তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রকৃতপক্ষে নিজেদের সুবিধার পেছনে ছোটে। ’
গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে পড়ে এখন প্রযুক্তি সংস্থাগুলো মোবাইল ডিভাইস ক্রয়ে উৎসাহিত করতে নিজেদের পণ্যকে ‘অতি-সুরক্ষিত’ বলে দাবি করছে। ফিনল্যান্ডের বিটিয়াম একটি ফোন বিক্রি করে, যার মধ্যে একটি গোপনীয়তা মুড রয়েছে, যা ডিভাইসের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা এবং ব্লুটুথ নিষ্ক্রিয় করে রাখতে পারে। বিটিয়ামের ভাইস প্রেসিডেন্ট টেরো সাভোলাইনেন বলেন, মোবাইল ডিভাইস সেই ব্যক্তির কাছেই নিরাপদ, যিনি এটি সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে জানেন।
তিনি বলেন, ‘যদি আপনার কাছে একটি নিরাপদ ফোন থাকে, তার মানে এই নয় যে, আপনি নিরাপদ রয়েছেন। ব্যবহারকারীকে নিরাপদে ডিভাইসটি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সে বিষয়ে জানতে হবে। ডিভাইসের অ্যাপ্লিকেশনগুলো অত্যধিক অ্যাক্সেস দিলে তা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বাড়াতে পারে। একটি অনিরাপদ গুগল অ্যাকাউন্ট সাইবার অপরাধীদের অথবা অন্যদের আপনার ডেটা অ্যাক্সেস করার সুযোগ করে দিতে পারে। ’
সাইলেন্ট পকেট, একটি মার্কিনভিত্তিক কোম্পানি, যা ওয়ালেট, ল্যাপটপ ব্যাগ এবং ট্রাভেল ব্যাগসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে। এগুলো ওয়্যারলেস এবং রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) সিগন্যাল ব্লক করতে পারে। সাইলেন্ট পকেটের প্রতিষ্ঠাতা অ্যারন জার জানান, তাদের পণ্য বেশ কয়েক বছর ধরেই বাজারে আছে। কিন্তু করোনা মহামারির সময় কন্টাক্ট ট্রেসিং শুরুর পর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। এরপরই তাদের পণ্যের বিক্রি বেড়েছে।