মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে যশোরে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা মরহুম তরিকুল ইসলামের স্মরণসভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাজনীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। বিএনপি তার ৩১ দফার আলোকে দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কাজ করে যাচ্ছে। মরহুম তরিকুল ইসলামও আমৃত্যু মা, মাটি ও মানুষের মুক্তির সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। আজকের নতুন প্রজন্মকে তরিকুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন ও শিষ্টাচার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ব্যক্তিগত লাভাবান বা অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে যিনি বা যারা রাজনীতি করেন বা করেছেন তাদের পরিণতি দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। পতিত স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টদের পরিণতি কী হতে পারে তা দেশের মানুষ ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে উপলব্ধি করেছে। তাই আগামীর বাংলাদেশ হতে হবে শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ। আর মানুষের ও গণবিপ্লবের সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে ঐক্যবদ্ধতার কোনো বিকল্প নেই।
তারেক রহমান বলেন, আজকের এই স্মরণ সভায় হাজারো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে মরহুম তরিকুল ইসলাম কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। তরিকুল ইসলাম সারাজীবনই আদর্শের সাথে কোনো বেইমানি করেননি। বিগত স্বৈরাচার এরশাদ আমলে এবং ফ্যাসিস্ট পতিত স্বৈরাচার হাসিনার আমলে ও ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে মরহুম তরিকুল ইসলাম বার বার কারা বরণ ও হামলা, মামলার শিকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি কখনো তার আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি। মরহুম তরিকুল ইসলামের সাথে আমার কাজ করার বেশি অভিজ্ঞতা নেই। তারপরও যতটুকু সময় পেয়েছি ততটুকু সময়ে আমি তার কাছ থেকে মানুষের জন্য রাজনীতি করা শিখেছি। ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে আমি ও মরহুম তরিকুল ইসলাম সাহেব এক সাথে কারাবরণ করেছি। একদিন পিজি হাসপাতালে কিছু সময়ের জন্য তাঁর সাথে আমার দেখা হয় ও খুব সামন্যই কথা হয়। জীবনে প্রথম কারাবরণ করায় আমি কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। আমাকে দেখে তরিকুল ইসলাম সাহেব বললেন, ‘তারেক বুকে সাহস রাখ, নিজেকে শক্ত রাখ, ইনশাল্লাহ একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।’ সেই কথা শুনে আমি কিছুটা হলেও সাহস পেয়েছিলাম।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাজনীতি করার কারণে মরহুম তরিকুল ইসলামকে এরশাদ সরকারের আমলে কিছু দিন গুম করা হয়েছিল। তারপর তিনি বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। হামলা ও মামলার শিকার হয়েছে। বহু মিথ্যা মামলায় তাকে আটক করে রাজনৈতিক আদর্শচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ততই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আাদর্শের প্রতি অটুট ও অবিচল থেকে মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। মরহুম তরিকুল ইসলাম বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার একজন বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, আজ রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার সময় এটা নয়। তারপরও দুই একটি কথা না বলে পারছি না। ছাত্র জনতার মহাবিপ্লবের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারকে উৎখাত করেছি। হাসিনাসহ অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু তাদের দোসর, প্রেতাত্মারা এখনো সর্বত্র বসে আছে। তারা প্রশাসনকে অস্থিতিশীল করে নিজেদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। মনে রাখতে হবে, এসব পতিত স্বৈরাচারের দোসররা সময় সুযোগ বুঝে ফের জাতির ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। আপনারা যারা জাতীয়তাবাদের আদর্শ বুকে লালন করেন, তাদের বজ্রকঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সব রকম ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দেশকে সত্যিকারের গণতন্ত্রের পথে নিতে হবে। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেবল সংবিধানে কয়েকটি শব্দ যোজন বিয়োজন করলেই সংস্কার হবে না। সংস্কার করতে হলে প্রথমেই মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে তুলে ধরেছে। সেই দাবি বাস্তবায়নে বিএনপি কাজ করে যাচ্ছে। আপনাদের সেই দাবি পূরণে এক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে নিজেদের বিশৃঙ্খলা বা অনৈক্যরে সুযোগে ফের স্বৈরাচার যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠে না পারে।
পরে তিনি মরহুম তরিকুল ইসলামের রুহের মাগফেরাত কামনা করে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। মরহুম তরিকুল ইসলামের বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরে বক্তৃতা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যশোর বারের সাবেক সভঅপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ডাক্তার হারুন অর রশীদ, প্রেস ক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, অধ্যাপক আয়ুব হোসেন, তন্ময় সাহা, এজেড এম সালেক, মোশারফ হোসেন, মাওলানা বেলায়েত হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ।
স্মরণ সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মরহুম তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম, দুই সন্তান শান্তুনু ইসলাম সুমিত ও খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খান, বিএনপি নেতা গোলাম রেজা দুলু, সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ, একেএম শরফুদ্দৌলাহ ছটলু, মাহাতাব নাসির পলাশ, মাওলানা আব্দুল মান্নান, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, এ্যাড. জাফর সাদিক, যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, সেক্রেটারি আনছারুল হক রানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, সেক্রেটারি মোস্তফা আমির ফয়সাল প্রমুখ। এছাড়া এই স্মরণ সভায় খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।