সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনের ওপর ভিত্তি করে ঢাকাকে অংশীদার ও সহযোগিতা চুক্তির (পিসিএ) প্রস্তাব দিয়েছে ব্রাসেলস। আর এতে সম্মত ঢাকা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দু’পক্ষের প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। আর ইইউর পক্ষে নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিকে মোরা।
সংলাপ নিয়ে ব্রিফিংয়ে ইইউর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্জনগুলো স্বীকৃতি দেয় সংস্থাটি। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ করতে আগ্রহী ইইউ, যাতে এ অঞ্চলে ব্রাসেলসের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে।
সংলাপের ফাঁকে ব্রিফিংয়ে এনরিকে মোরা বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নিরাপত্তা, কানেক্টিভিটি, সাইবার ও মেরিটাইম নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেছি। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ করতে আগ্রহী। এখানে বাংলাদেশ আমাদের জন্য মুখ্য ভূমিকায় রয়েছে। তাঁরা চান যাতে বিশ্বের এ অংশটিতে ইইউর স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে। তিনি বলেন, বৈঠকে তাঁরা পররাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। কী কারণে বাংলাদেশ কোন দেশের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক রাখছে, সে বিষয়ে তাঁরা উভয়ে মতপার্থক্যটি বুঝে নিচ্ছেন।
আগামীতে ঢাকা-ব্রাসেলস সম্পর্ক কোথায় যাবে- জানতে চাইলে এনরিকে মোরা বলেন, দুটি কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় করছে ইইউ। প্রথমটি হচ্ছে, বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্য। দ্বিতীয়টি, ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইইউর বিশেষ আগ্রহ ও স্বার্থ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কৌশল হচ্ছে, এ অঞ্চলে আমাদের উপস্থিতি বাড়ানো।
ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস) নিয়ে বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে খুব একটা তফাত নেই বলে জানিয়েছেন শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখানে কাউকে সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী করতে পারবে না। তবে বাংলাদেশ শান্তি রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, পিসিএ নিয়ে দু’পক্ষ কাজ করবে। এ চুক্তিতে একটি দরকষাকষির প্রক্রিয়া রয়েছে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি ও ইইউর সঙ্গে যাত্রার কারণে সম্পর্ক আরও গভীর ও বিস্তৃতির দিকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ চুক্তি হলে সম্পর্ক আরও গভীর করা সহজ হবে। ইইউর কাঠামোর মধ্যে সম্পর্ক গভীর করার এটিই মাধ্যম। আসিয়ানের দেশগুলোর সঙ্গে ইইউর এ চুক্তি রয়েছে।
তিনি বলেন, বৈঠকে খাদ্য নিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসবাদ দমনসহ সব ধরনের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, নিরাপত্তা ও মানবিক দিকের পাশাপাশি এ সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইইউ তার অবস্থান তুলে ধরেছে।
তিনি বলেন, বৈঠকে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ অঞ্চলে কানেক্টিভিটি নিয়ে কথা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক, ইউক্রেন সংকটসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় বাংলাদেশের অবদান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি শান্তি রক্ষা, মেরিটাইম, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক সংকট এবং ২০২৯ সালের পরও ইইউর বাজারে শুল্ক্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা বাংলাদেশ কীভাবে পেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইইউ প্রতিনিধি দলটির আজ ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।