বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে স্থাবর সম্পদের দিক থেকে এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। রাজধানীর ধানমন্ডি ও উত্তরায় তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট ও খুলনায় চারতলা একটি বাড়ি আছে। অস্থাবর সম্পদ ও বার্ষিক আয়ের দিক থেকে এগিয়ে আছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী ইকবাল হোসেন। তাঁর ব্যবসায় বিনিয়োগ, নগদ টাকাসহ অস্থাবর সম্পদ আছে প্রায় তিন কোটি টাকার। আর বার্ষিক আয় ৮০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাঁদের হলফনামায় সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। এতে প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি তাঁদের আয়, আয়ের উৎস, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসহ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মামলাসহ আরও বেশ কিছু তথ্য দিতে হয়েছে। হলফনামা বিশ্লেষণ করে উপরিউক্ত তথ্য পাওয়া গেছে। শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে খায়ের আবদুল্লাহ লিখেছেন, তিনি ‘স্বশিক্ষিত’। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। পেশায় ব্যবসায়ী খায়ের আবদুল্লাহ ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার এবং খুলনা ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড নামের অপর একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। প্রতিষ্ঠান দুটি জাহাজে মালামাল ওঠানো-নামানোর কাজে নিয়োজিত লোকবল সরবরাহ করে। খায়ের আবদুল্লাহর বার্ষিক আয় ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
আবুল খায়ের আবদুল্লাহর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ২ কোটি ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭২ টাকা, ব্যাংকে ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭২ টাকা, কোম্পানির ২০ লাখ টাকার শেয়ার, নিজ নামে ৩২ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি। উপহার হিসেবে তিনি নিজে ১০ ভরি স্বর্ণালংকার পেয়েছেন এবং লাইসেন্স করা দুটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে তাঁর। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রী লুনা আবদুল্লাহর রয়েছে নগদ ১ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, ৪৯ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি, ২০ ভরি স্বর্ণালংকার। খায়ের আবদুল্লাহর স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে তাঁর নিজের নামে খুলনায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যের চারতলা বাড়ি, ধানমন্ডিতে ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট ও উত্তরায় ১৪ লাখ টাকা মূল্যের ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে। তবে তাঁর স্ত্রীর নামে কোনো স্থাবর সম্পদ নেই।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন বিএসসি পাস। তাঁর নামে দুটি ফৌজদারি মামলা আছে, তবে মামলা দুটির ওপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আছে। পাঁচ বছরে তাঁর আয় ও সম্পদ দুই–ই বেড়েছে। তবে স্থাবর সম্পদ বাড়েনি। পাঁচ বছর আগে ইকবাল হোসেনের বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ৫৫ লাখ, এখন তাঁর আয় বেড়ে হয়েছে ৮০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগে তাঁর ব্যবসায় বিনিয়োগ, নগদ টাকাসহ অস্থাবর সম্পদ ছিল প্রায় ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকার সমপরিমাণ। কিন্তু এখন তা দেড় গুণের বেশি বেড়ে প্রায় তিন কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।
ইকবাল হোসেন ইওকোহামা লেবেলস অ্যান্ড প্রিন্টিং (বিডি) কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ ছাড়া সাউথ অ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল লিমিটেডের অংশীদার, সাউথ অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স (প্রা.) লিমিটেড ও সাউথ অ্যাপোলো প্রোপার্টিজ লিমিটিড নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ফয়জুল করিমের পেশা শিক্ষকতা। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি ফৌজদারি মামলা ছিল। সব কটিই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। তাঁর নগদ অর্থ আছে ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ও ব্যাংকে জমা আছে ১ লাখ ২১ হাজার ৭৬৯ টাকা। তাঁর বার্ষিক আয় ১৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা। কৃষিজমি রয়েছে ৮২৯ শতাংশ, দালান একটি ও ফ্ল্যাট রয়েছে দুটি।
কামরুল আহসান বরিশাল সিটির প্রয়াত মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের ছেলে। তিনি এমএসএস পাস। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। স্বতন্ত্র এই প্রার্থীর নগদ রয়েছে ৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ আছে ১ কোটি টাকা। তাঁর ২৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার একটি গাড়ি, ব্যবসায় পুঁজি আছে ৭ লাখ টাকা।
প্রার্থীদের হলফনামার বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান হলফনামার ছকটি অসম্পূর্ণ এবং এতে বেশ সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এতে আরও কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর বয়স, বিদেশি নাগরিকত্ব আছে কি না, আয়ের উৎসের বিস্তারিত বিবরণ, সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে কি না ও প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের বিস্তারিত বিবরণ হলফনামার ছকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। একই সঙ্গে এসব বিবরণের সত্যতা কমিশনকে যাচাই-বাছাই করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। হলফনামার সম্পদের তথ্য বা অন্যান্য তথ্য যাচাই করার কোনো বিধান নেই জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ইসি এসব হলফনামা একত্র করে জনসাধারণের মধ্যে প্রচারের নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এবার এ ধরনের কোনো নির্দেশনা নেই।