গত ১৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তাদের আসনে বসতে না পারায় আক্ষেপ জানিয়েছেন বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী।
আমরা বাহুবলে সেদিন আত্মসমর্পণস্থলে যোদ্ধাদের নিয়ে এসেছিলাম। তাই সেদিন আমার অনুষ্ঠানে বসে বারবার মনে হচ্ছিল, এখানে খালেদা জিয়াও ছিল না, শেখ হাসিনাও ছিল না। ১৯৭১ সালের ১৬ তারিখ সকাল সাড়ে ৯টায় আমি তো ছিলাম। তাহলে একটু জায়গা তো আমার পাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু হয়নি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে গণফোরাম আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধার চোখে আজ ও আগামীর বাংলাদেশ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় কাদের সিদ্দিকী এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে জিয়াউর রহমান জাতির পিতা। এই অসঙ্গতি আমি কখনোই মানিনি, এখনও মানিনা। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের পিতা।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, গত ১২ বছর রাষ্ট্রীয় কোনো কিছুতে আমার আফসোস হয় না। দাওয়াত পেলাম কি পেলাম না, রাস্তায় জায়গা পেলাম কি পেলাম না, সম্মান কেউ দেখাল কি দেখাল না এগুলো নিয়ে কোন মাথা ব্যথা হয় না। গত ১৬ তারিখ সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হয়েছে, আমি সেখানে গিয়েছিলাম। সামনেই আসন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বক্তারা ছিল আমাদের থেকে ৬০-৭০ ফুট দূরে। সেখানে কোনো নৈকট্য ছিল না, সান্নিধ্য ছিল না। রাজদরবারেও অত দূরত্ব থাকে না। যেটা আমি সেদিন দেখে এসেছি। কার্ডে লেখা ছিল ফোন ও কলম নেওয়া যাবে না। আমি ফোনও নিইনি, কলমও নিইনি। যেয়ে দেখি সবার কাছেই ফোন, সবার কাছেই কলম। সবার কাছেই হয়তো ছুরি-চাকু থাকতে পারে। আমার মতো একজন ভীতু কিছুই নিইনি।
অনুষ্ঠানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ওই অনুষ্ঠানের আয়োজকরা এত কামিলকার যে সেখানে মুজিব লিখতে পারেনি, মুজি লিখেই শেষ করেছে। সেখান থেকে শেখ হাসিনা শপথ পড়িয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে তাকে কিছু বলতে পারিনি, কিছু করতেও পারব না। তার জীবন মান সম্মান হুমকির মুখে পড়ুক একজন মানুষ হিসেবে আমিও সেটি চাই না। আমরা একটা খুব অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
এই নেতা বলেন, সরকারের এবং যারা এই আয়োজক কমিটি গঠন করেছিলেন তাদের সবার উচিত ছিল এই অনুষ্ঠানে সবাইকে আনা। এ অনুষ্ঠান একার হওয়া উচিত নয়। এ অনুষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার জন্য মস্ত বড় একটা সুযোগ ছিল। বিএনপিকে এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালে, অন্যান্য দলকে এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালে, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমদের এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালে এ সুবর্ণজয়ন্তী পালনের গাম্ভীর্য, মর্যাদা অনেক বেশি হতো। রামনাথ কোবিন্দ এলেই বাংলাদেশের মর্যাদা আসমানে ওঠে না।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ.স.ম. আব্দুর রব, গণফোরাম (একাংশ) সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।