সুন্দরবনে পরিবেশ দূষণকারী সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশনা প্রদান করেছে। গত ২৯ মার্চ এডিপি অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. সাহাব উদ্দিন এমপি এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান করেন। মন্ত্রীর এই নির্দেশনার আলোকে বন বিভাগ সুনির্দিষ্টভাবে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। গত ১৬ এপ্রিল সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে সেসব সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা জানা যায়।
সুন্দরবনে পরিবেশ দূষণকারী সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক যেসব নিদের্শনা প্রদান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তা হলো (১) সুন্দরবনে চলাচলকারী কোনো নৌযান/পর্যটকবাহী নৌযান হতে যাতে কোনোপ্রকার সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক, পলিথিন, অপচনশীল দ্রব্যাদি সুন্দরবনের অভ্যন্তরে পানি ও স্থলভাগে ফেলা না হয় তা কঠোরভাবে মনিটরিং ও নিশ্চিত করতে হবে, (২) পর্যটকবাহী জলযান হতে বনভূমিতে প্রবেশের সময়ে কোনো পর্যটক সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের মোড়কযুক্ত চিপস, বিস্কুট, কেক বা অন্য কোনো খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট ও পানি বা অন্য কোনো পানীয়ের বোতল বহন করতে পারবেন না, (৩) সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটকদের দীর্ঘ পথ অতিক্রমের ক্ষেত্রে বিশেষত কটকা/ জামতলা/নীলকমল পরিদর্শনের সময়ে পানি পানের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ট্যুর গাইডগণ সঙ্গে করে পানির বড় বোতল/জার (৫ লিটার) সঙ্গে নেবেন এবং সেখান থেকে পর্যটকদের পানি সরবরাহ করবেন, (৪) সুন্দরবনে এক দিনের ট্যুর পরিচালনায় সম্পৃক্ত ট্রলার/জলযানসমূহে সিঙ্গেল ইউজ খাবারের প্লেট, গ্লাস, পলিথিন ব্যবহার করা যাবে না এবং কোনো প্রকার বর্জ্য নদীতে ফেলা যাবে না, (৫) সুন্দরবন এবং তত্সংলগ্ন নদনদীতে চলাচলকারী লঞ্চ ও ট্রলার মালিক এবং তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সমিতির সদস্যদের তাদের নৌযানসমূহে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের থালা, গ্লাস, বাটি, পলিথিন ইত্যাদি যাতে ব্যবহার করা না হয় এবং সুন্দরবনের নদীতে ফেলা না হয় সে সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।
ট্যুরিস্ট স্পটসমূহে সচেতনতামূলক সাইন বোর্ড স্থাপন করতে হবে, (৬) যে বনকর্মীগণ পর্যটকবাহী লঞ্চে নিরাপত্তা গাইড হিসেবে গমন করেন এবং সংশ্লিষ্ট ট্যুরিস্ট স্পটসমূহ এবং বন বিভাগের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত বনকর্মীদের এসব বিষয় মনিটরিং ও বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ প্লাস্টিক দূষণমুক্ত রাখার স্বার্থে কেউ যদি এসব নির্দেশনা অমান্য করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে বন বিভাগের চিঠিতে।
সুন্দরবনকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত করার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মোংলার আহ্বায়ক মো. নূর আলম শেখ বলেন, আমরা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে এরকম সিদ্ধান্ত গ্রহণে অভিনন্দন জানাই।
সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এমপি বলেন, এই মুহূর্তে সুন্দরবনে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে সবাইকে এ নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। সুন্দরবনের পর্যটক এবং ট্যুর অপারেটর কেউ-ই সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার করতে পারবে না। কেবল আইন করে সবকিছু হয় না। পলিথিন বন্ধে আইন থাকা সত্ত্বেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তাই মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি। এ বিষয়ে সুন্দরবনের ট্যুরিস্ট স্পট করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা কাজ শুরু করেছি। পর্যটকরা এখনো নির্দেশনা মেনে চলায় সচেতন হয়নি। তারা সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক নিয়ে আসলেও তা নিয়ে আমরা বনের অভ্যন্তরে ঢুকতে দিচ্ছি না।