মঙ্গলবার দেশটির মানবাধিকার আইনজীবীদের সংগঠন ইমার্জেন্সি লইয়ার্স নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, সুদানের আধাসামরিক বাহিনী খার্তুমের কাছে তিন দিন অভিযান চালিয়ে ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। অধিকার গোষ্ঠীটি জানিয়েছে যে শত শত লোক আহত বা নিখোঁজ রয়েছেন এবং আরো শত শত মানুষ “মৃত্যুদণ্ড, অপহরণ, জোরপূর্বক গুম এবং লুটপাটের” শিকার হয়েছেন।
আইনজীবীদের এই নেটওয়ার্ক জানিয়েছে যে হোয়াইট নাইল নদী পার হয়ে পালানোর চেষ্টা করার সময় আধাসামরিক বাহিনী গ্রামবাসীদের উপর গুলি চালায়। ফলে অনেক বেসামরিক ব্যক্তি নদীতে ডুবে যেতে পারেন, তাদের লাশ ভেসে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে
সেনাসমর্থিত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিশুসহ মোট ৪৩৩ জন নিহত হয়েছে।
বার্তাসংস্থা এএফপিকে একটি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা জানা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সূত্রটি নাম প্রকাশ না করে বলেছে, “কিছু মৃতদেহ এখনও রাস্তায় পড়ে আছে, অনেকে তাদের বাড়িতে নিহত হয়েছেন এবং তাদের কাছে কেউ পৌঁছাতে পারছে না।”
দেশটির বিদ্রোহী আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস – আরএসএফ এর হামলার লক্ষ্য ছিল রাজধানী থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে হোয়াইট নাইল রাজ্যের আল-কাদারিস এবং আল-খেলওয়াত গ্রাম।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “অনেক নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং শত শত পরিবারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে এমন ভয়াবহ প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।”
হোয়াইট নীল রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ
যুদ্ধরত দুই গ্রুপই (সেনাবাহিনী এবং আরএসএফ) বর্তমানে হোয়াইট নীল রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ অর্জনের চেষ্টা করছে। সেনাবাহিনী দক্ষিণাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, আরএসএফ উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মঙ্গলবার আইনজীবীদের নেটওয়ার্ক জানিয়েছে যে সেনাবাহিনী এর আগে খার্তুমের পূর্বাঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের উপর ‘বর্বর’ আক্রমণ চালিয়েছিল।
একই দিন জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা থেকে প্রদান করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে জানিয়েছে, “সংক্ষিপ্ত বিচারে মৃত্যুদণ্ড, যৌন সহিংসতা এবং অন্যান্য আইনের লঙ্ঘন এবং নির্যাতন আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে সম্মান করতে উভয় পক্ষ সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।”
সুদানে গৃহযুদ্ধ
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানেগৃহযুদ্ধ শুরু হয়। তারপর থেকে এ পর্যন্ত সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছেন।
জাতিসংঘ সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন ইনিশিয়েটিভ এর তথ্য অনুসারে, আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ, অর্থাৎ সুদানের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক, “চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ” মুখোমুখি।
আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটি এটিকে মানব ইতিহাসে ‘এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট’ বলেও অভিহিত করেছে।