সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে ন্যাটো সামরিক জোটের সদস্য করায় আপত্তি প্রত্যাহার করলো তুরস্ক। এতদিন নরডিক দেশ দুটিকে ন্যাটোভুক্ত করায় ভেটো দিচ্ছিল আঙ্কারা। তবে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে সেই অবস্থান পরিবর্তনে রাজি হয়েছে এরদোয়ান প্রশাসন।
ন্যাটোর নিয়ম অনুসারে, নতুন কোনো সদস্য নিতে হলে জোটের সব দেশেরই সম্মতি থাকতে হয়। ফলে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার আবেদন জানালেও তুরস্কের আপত্তির কারণে তা আটকে গিয়েছিল।
তুরস্কের অভিযোগ, দেশ দুটি কুর্দি বিদ্রোহীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। এটি বন্ধ না হলে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে ন্যাটো সদস্য করায় ভেটো দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
তবে মাদ্রিদে ন্যাটো সম্মেলনের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার (২৮ জুন) দীর্ঘ বৈঠকে অবশেষে সমঝোতায় পৌঁছায় তুরস্ক, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। সেখানে তিন দেশ একটি চুক্তিতে সই করেছে, যেখানে তুরস্কের উদ্বেগের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
যে শর্তে নমনীয় হলো তুরস্ক
ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন বিদ্রোহীদের তুরস্কে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপ আরও জোরালো করতে রাজি হয়েছে সুইডেন। আঙ্কারা যাদের হুমকি হিসেবে দেখে, তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি কঠোর করার জন্য সুইডিশ ও ফিনিশ আইন সংশোধন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে, তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার বিষয়েও সম্মত হয়েছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন।
তুর্কি প্রেসিডেন্ডের কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুসারে, নিষিদ্ধঘোষিত পিকেকে (কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি) ও এর সহযোগীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তুরস্ককে পূর্ণ সহযোগিতা করবে দেশগুলো।
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সউলি নিনিস্তো বলেছেন, তিন দেশ একটি যৌথ স্মারকে সই করেছে, যার মাধ্যমে একে অপরের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে হুমকি মোকাবিলায় পূর্ণ সহযোগিতা আরও বাড়ানো হবে।
সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসন বলেছেন, এটি ন্যাটোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।
ফলাফল কী?
ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোয় যোগদানের তীব্র বিরোধী রাশিয়া। পশ্চিমারা এই সামরিক জোট সম্প্রসারণ করতে চাইছে, এমন দাবি তুলে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করেছিল রাশিয়া। কিন্তু মস্কোর সেই অভিযান উল্টো ফল দিতে শুরু করেছে। এতদিন নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে থাকলেও ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর ন্যাটোয় যোগ দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে সুইডেন-ফিনল্যান্ডের মতো প্রতিবেশীরা।
বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, দুই গুরুত্বপূর্ণ দেশকে ন্যাটো জোটে নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় একটি বাধা অপসারণ হলো। ফিনল্যান্ড ও সুইডেন আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও সুপ্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনীর অধিকারী হওয়ায় তা উত্তরাঞ্চলের হুমকি মোকাবিলায় ন্যাটোকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
এই দুটি দেশ ন্যাটো জোটে পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর বাল্টিক সাগর একটি ন্যাটো লেকে পরিণত হবে বলে মনে করছেন গার্ডনার।