ঝিনাইদহের কৃষক আব্দুল গফ্ফার তার জমিতে সুইট লেমন চাষ করে সফলতা এনেছেন। নতুন জাতের এই লেবুর ফলন হয়েছে অনেক, বিক্রিও হচ্ছে ভালো। প্রতিদিনই অর্ডার পাচ্ছেন, অনলাইনে বিক্রি করেই চাহিদা মেটাতে পারছেন না। জুস তৈরির কাজে এই লেবু সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় বলে জানান আব্দুর গফ্ফার।
আব্দুল গফ্ফার জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার পাতবিলা গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে গফ্ফার সবার ছোট। আব্দুল গফ্ফার জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই গাছ-পালা আর পশু-পাখির প্রতি বেশ দুর্বল ছিলেন। নিজে ছাত্র জীবনে কবুতর পালন করতেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে বাড়িতে এসে নানা জাতের গাছ রোপণ করতেন। এভাবে তিনি গাছের ভক্ত হয়ে ওঠেন। ২০১১ সালে তিনি প্রথম কর্মজীবনে পা রাখেন। বর্তমানে তিনি ইসলামী ব্যাংক ঝিনাইদহের ডাকবাংলো শাখায় কর্মরত। ব্যক্তি জীবনে স্ত্রী ও তিন সন্তানের জনক গফ্ফার।
আব্দুল গফ্ফার আরও জানান, ২০২০ সালে তিনি এক বিঘা জমিতে মালটার চাষ করেন। এই মালটা ক্ষেতের মাঝেই তিনি সুইট লেমন চাষ করেছেন। যশোরের বসুন্দিয়া এলাকা থেকে তিনি যশোর কোরিয়ান জাতের চারা সংগ্রহ করেন। এক বিঘা জমিতে ১৫০টি চারা রোপণ করেছেন তিনি। তিনি জানান, ৩৫০ টাকা দরে প্রতিটি চারা ক্রয় করেন। এরপর জমি তৈরি করে সেখানে চারাগুলো রোপণ করেন। এই লেবু চাষে খরচ খুবই কম, তবে বেশি খরচ হয় চারা কিনতে। জমি চাষের পর আগাছা পরিষ্কার ছাড়া আর কোনো খরচ নেই। জমিতে তিনি কোনো সার বা কীটনাশক দেননি।
আব্দুল গফ্ফার আরও জানান, মাত্র ছয় মাসের মধ্যে তার এই সুইট লেমন গাছে লেবু আসতে শুরু করে। প্রতিটি গাছে ৪শ পর্যন্ত লেবু এসেছে। একশ লেবুতে এক কেজি হয়। এগুলো তিনি ৬ থেকে ৭শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। প্রতিটি গাছে তার ২৪শ থেকে ২৫শ টাকার লেবু বিক্রি হয়েছে। এই হিসেবে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করছেন। এখনও গাছে লেবু রয়েছে। পাশাপাশি লেবুর বাগানে মালটা ও পেয়ারা হচ্ছে। এগুলোও তিনি বিক্রি করতে পারবে। তিনি বলেন, এই লেবুটা সাথী ফসল হিসেবে চাষ করলেও বর্তমানে এটাই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশা করছেন আগামীতে আরও বেশি এই লেবুর চাষ করবেন।
এ বিষয়ে ক্ষেতের সার্বক্ষণিক পরিচর্যায় থাকা আব্দুল মাজেদ জানান, শুধু পাহারা দেওয়া আর লেবু উঠিয়ে বিক্রি করা ছাড়া ক্ষেতে তেমন কোনো পরিশ্রম নেই। গাছে যখন লেবু ঝুলে থাকে তখন দেখতে খুব সুন্দর লাগে। সাধারণত লেবুর রং সবুজ হলেও এই সুইট লেমন এর রং কমলা। লেবুর ক্ষেত দেখতেও অনেকে ভিড় করেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, নিজেদের ক্ষেতে চাষ করবেন বলে অনেকেই এখান থেকে চারা নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ক্ষেতে বর্তমানে তিন হাজার চারা রয়েছে বলে জানান মাজেদ। ইতোমধ্যে ২৫০ টাকা দরে এক হাজারের বেশি চারা বিক্রি করেছেন। ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজগর আলী বলেন, কৃষক আব্দুল গফ্ফার তার জমিতে সুইট লেমন চাষ করেছেন এটা আমার জানা নেই। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে খোঁজ খবর নেওয়ার পর কৃষক আব্দুল গফ্ফারের সুইট লেমন চাষে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।