সিলেট অঞ্চলে আজ (শনিবার) স্বল্পমাত্রার চারটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। স্বল্পমাত্রার হলেও প্রতিটি ভূমিকম্প বুঝতে পেরেছেন সেখানকার অধিবাসীরা। এতে তাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। একদিনে একই অঞ্চলে চারটি ভূমিকম্প হওয়ার ঘটনা দেশের ইতিহাসে আজই প্রথম।
শনিবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে এর আগে একই অঞ্চলে একদিনে চারটা ভূমিকম্প হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ভূমিকম্প ওখানেই হয়েছিল। ২০২০ সালের এপ্রিলে সিলেট অঞ্চলে আরেকটা ভূমিকম্প হয়েছিল। এগুলো মাইনর বা ছোট মাত্রার ভূমিকম্প।’
মমিনুল ইসলামের তথ্যমতে, আজ সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৩ মাত্রার, সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ৫৩ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ১ মাত্রার, ১১টা ২৯ মিনিট ৫১ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ২ দশমিক ৮ মাত্রার এবং ১টা ৫৮ মিনিটে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বল্প গভীরে ভূমিকম্প হয়েছে আজ। ১৩ বা সাড়ে ১৩ কিলোমিটার গভীরে হয়েছে। সিলেট থেকে ১০ বা ১২ কিলোমিটারের মধ্যে ভূমিকম্পগুলো হয়েছে। এই ভূমিকম্প অন্যান্য জেলাতেও বোঝা যায়নি। কিন্তু ওখানকার লোকজন প্রতিটা ভূমিকম্পই বুঝতে পেরেছে। মানুষজন আতঙ্কিত হয়েছে। যদিও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু ছিল না। কারণ, এই স্বলমাত্রার ভূমিকম্প ক্ষয়ক্ষতি হবে না।’
আতঙ্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের রেকর্ড হয়েছে ৪টা ভূমিকম্প। কিন্তু অনেকে বলেছে, ৫ বা ৬টা ভূমিকম্প হয়েছে। অনেক সময় না হলেও মানুষ আতঙ্কে মনে করে ভূমিকম্প হয়েছে।’
ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের এই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলটা একটু ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে আছে। কেননা সেখানে ডাউকি ফল্ট আছে। বাংলাদেশের জাতীয় সীমান্তে তিনটা প্লেট আছে। সেগুলো হলো ইউরোশিয়ান প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেট এবং বার্মা মাইক্রো প্লেট। এই তিনটা প্লেটের সংযোগস্থল আমাদের জাতীয় সীমান্ত দিয়ে গেছে। ডাউকি ফল্ট, ভুটান, নেপাল – এই সাইটগুলোতে ভূমিকম্প কয়েক দিন আগেও হয়েছে। পঞ্চগড়ের কাছে জলপাইগুঁড়িতে কয়েক দিন আগে বেশ কয়েকটা ভূমিকম্প হয়েছে। সেটার কম্পনও বাংলাদেশে হয়েছে। একইভাবে ভুটানের ভূমিকম্পের কম্পনও বাংলাদেশে হয়েছে। সিলেট অঞ্চলে ডাউকি ফল্ট আছে, এখানেও ভূমিকম্পের সম্ভাবনা অনেক বেশি। আবার পূর্বাঞ্চলের সেগিং ফল্টের দিকেও ভূমিকম্পের সম্ভাবনা আছে। এই প্লেট বাউন্ডারিগুলো সবই আমাদের খুবই কাছে। সে কারণে এভাবে ভূমিকম্পগুলো হয়ে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্পের দুই ধরনের নির্দেশক আছে। প্রথমটা হলো আফটার শক বা একটা বড় ভূমিকম্প হলে তারপরে সেটার চেয়ে কমপক্ষে ১ মাত্রার কম মাত্রার ভূমিকম্প হয় কয়েকটা। যেমন জাপানে যখন রিখটার স্কেলে ৯ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল, ওটাতে সুনামিও হয়েছিল। ৯ দশমিক ২ মাত্রার পর রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পই হয়েছিল প্রায় ৬০০ বার। আবার অনেক সময় দেখা যায়, ছোট ছোট ভূমিকম্প হতে হতে বড় একটা ভূমিকম্প হয়ে যায়। এটাকে বলা হয়, বিফোর শক। আবার এমনও হয়, কিছুদিন পর পর ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়ে শক্তি বেরিয়ে যায়, সেই এলাকা অনেক ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকে। কারণ সেখান থেকে শক্তি বেরিয়ে গেছে। শক্তি যদি আটকে থাকে, তাহলে অনেক বছর পরে হঠাৎ করে বড়ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’