দেশে ডিমের বাজারে চলছে অস্থিরতা। কারসাজি করে বাড়ানো হচ্ছে দাম। যখন অভিযান চলে তখন কিছুটা দাম কমলেও পরে সেই আগের অবস্থা। ডিমে বাড়তি দাম। এ জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ডিমের বাজারের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে না বলে জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিউজ্জামান।
তিনি বলেন, ডিমের বাজারে এমন সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা রাতারাতি একটি ডিমের দাম চার টাকা বাড়িয়ে দিতে পারে। সেটি ভাঙতে না পারলে ডিমের দামে কোনো নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
বুধবার (২ নভেম্বর) বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা ও আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, বড় বড় কিছু করপোরেট কোম্পানি পোল্ট্রির বাচ্চা ফুটানো থেকে শুরু করে ডিম-মাংস সবকিছুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের হাতে এ খাতের নিয়ন্ত্রণ চলে গেলে সরকারও তখন নিরুপায় হয়ে পড়বে।
ডিমের বাজারে সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ডিমের বাজারে সিন্ডিকেটের বিষয়টি পরিষ্কার। কারণ যখন আগষ্টে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লো তখন একটি ডিমের দাম পাঁচ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হলো। সে সময় আমরা মাঠে নামলাম। নিলামের নামে একটি সাজানো ঘটনার মধ্য দিয়ে ডিমের দাম বাড়ানোর প্রমাণ মিললো। যে কোম্পানি দাম বাড়ালো তার সংবাদ সারাদেশ ছড়িয়ে গেলো।
তিনি আরও বলেন, এরপর যখন অভিযান চলছে তখন ডিম আমদানি করার ঘোষণা হলো। তখন আবার তিনদিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে গেলো বাজার। কিন্তু এরমধ্যে একটি টাকাও বাড়তি দাম পেলো না প্রান্তিক খামারিরা। ভোক্তার প্রায় ৫০০ কোটি টাকা নিয়ে গেলো সে সিন্ডিকেট।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিযোগিতা কমিশনকে দিয়ে মামলা করিয়েছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও তাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেওয়া রয়েছে। কিন্তু এ সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে লাভ হবে না।
তিনি বলেন, এখনো ডিমের দাম ভোক্তার কাছে কিছুটা বাড়তি। তবে এ দাম অস্বাভাবিক নয়। এখন ফিডের দাম বেড়েছে, বাচ্চার দাম বেড়েছে। প্রাণিসম্পদ থেকে পাওয়া আমাদের হিসাবে একটি ডিমে খরচ ১০ টাকা ৩৬ পয়সা। সেটা ১২ টাকা হতে পারে। কারণ মাঝে খামারি ডিলারদের লাভ ও সারাদেশে বিপণনের একটি খরচ রয়েছে।
তবে ডিমের দাম স্থায়ীভাবে কমাতে কাজ করা দরকার বলে মনে করেন এ এইচ এম সফিউজ্জামান। বলেন, ভারতে ২৪ রুপিতে এক হালি ডিম পাওয়া যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের টাকায় ৩০-৩২ টাকার মতো। সেখানকার খামারিরা কীভাবে সেটা দিচ্ছে। সেটা দেখা দরকার। গবেষণা দরকার। নিশ্চয় তাদের খরচ কম। আমাদেরও উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। প্রান্তিক খামারিদের সাবসিডি দিতে হবে।
তিনি বলেন, ফিডের দাম অস্বাভাবিক। সেটার ডিউটি কমানো যায় কি না, তাতে আবার রাজস্ব বোর্ডের আয় কমে যাচ্ছে। তবে ফিডের জন্য বসা দরকার। সেটা যাদের কাজ, তাদের করতে হবে। সে জন্য একটি মন্ত্রণালয় রয়েছে। তাদের করতে হবে।
বড় বড় কোম্পানি বাজার নিয়ন্ত্রক হয়ে গেছে উল্লেখ করে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, তারা (কোম্পানি) সব করছে। এ জন্য প্রান্তিকদের ভয়েজ রেইজ করতে হবে। এ খাতে অনেক সংগঠন কিন্তু কারা সঠিক সেটা জানতে হবে। প্রকৃত খামারিদের জন্য কাজ করতে হবে এসব সংগঠনগুলোকে।
সফিউজ্জামান বলেন, খামারিদের জন্য ব্যাংক সাপোর্ট নেই। অনেক অপ্রয়োজনীয় খাতকে এ দেশের ব্যাংক সাপোর্ট দিচ্ছে। কেন আপনাদের দেয় না, সেটা নিয়ে কাজ করুন।
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, পোল্ট্রি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে সব প্রকার সমস্যার সমাধান সম্ভব।
অন্যদিকে আলোচনা সভা শেষে সুমন হাওলাদারকে সভাপতি ও মো. ইলিয়াস খন্দকারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে সংগঠনটি।