মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চীনের সিনোফার্মের টিকা দিয়ে দেশব্যাপী গণটিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে নিবন্ধনের মাধ্যমে ৩৫ বছরের বেশি ব্যক্তিদের এই টিকা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, টিকার বরাদ্দ বাড়িয়ে রোববারই প্রতিটি জেলায় সিনোফার্মের টিকা পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ১৯ জুন থেকে সারাদেশের মেডিকেল শিক্ষার্থীসহ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সিনোফার্মের টিকাদান শুরু হয়। তবে এবার বড় পরিসরে এই কার্যক্রম শুরু হলো।
সোমবার (১২ জুলাই) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. শামসুল হক ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, আজ (সোমবার) থেকে সারাদেশেই সিনোফার্মের টিকার মাধ্যমে গণটিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলোতেই আমরা নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি। সে অনুযায়ী আমাদের টিকা কার্যক্রম চলছে। গত রোববার প্রতিটি জেলায় টিকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
শামসুল হক বলেন, সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে যারা আছেন, তারা টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারছেন। নিবন্ধনের পর এসএমএস দেওয়া হবে। এসএমএস পেলে নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে হবে।
দেশব্যাপী টিকা প্রয়োগ কার্যক্রমের সর্বশেষ খবর জানতে বেশ কয়েকটি জেলার সিভিল সার্জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত নিবন্ধন পাওয়া ব্যক্তিরা প্রথম ডোজ টিকা নিতে পারবেন।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১২টিতে আজ আমরা সিনোফার্মের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু করেছি। শুধুমাত্র কুলিয়ারচর উপজেলায় এই কার্যক্রম আমরা শুরু করতে পারিনি। কারণ, সেখানকার টিকা কেন্দ্রের একজন কর্মী করোনায় আক্রান্ত। আজকের মধ্যে কেন্দ্রটিকে জীবাণুমুক্ত করে আশা করছি কাল থেকে আমরা টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে দেব।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আমাদের জানিয়েছে, প্রতিটি কেন্দ্র টিকাদান কার্যক্রম শুরুর জন্য প্রস্তুতি রাখার। তবে আজই প্রতিটি উপজেলায় শুরু করতে হবে, এমন কোনো নির্দেশনা আসেনি।
মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বলে দেওয়া হয়েছে যে আমাদের যখনই টিকার প্রয়োজন হবে, তখনই জানানোর জন্য। সে অনুযায়ী টিকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল গাফফার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের প্রতিটি উপজেলাতেই সকাল থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলায় মোট পাঁচটি উপজেলা রয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলার জেলা সদর হাসপাতালে টিকা দেওয়া হচ্ছে। বাকি উপজেলায় সেখানকার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কেন্দ্রগুলোতে টিকা কার্যক্রম চলছে।
তিনি বলেন, জেলা সদর হাসপাতালে আগেই টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেখানে প্রবাসীদের টিকা দেওয়া হচ্ছিল। আজ থেকে পয়ত্রিশোর্ধ্ব সবাকেই টিকা দেওয়া হচ্ছে।
আব্দুল গাফফার বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত টিকা রয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সাত হাজার ২০০ ডোজ টিকা পাঠানো হয়েছে। এর আগেও সমপরিমাণ টিকা পাঠানো হয়েছিল। আর সেখান থেকেও কিছু টিকা এখনো রয়ে গেছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম চলতে থাকবে।
সংরক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) সেন্টারে সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানকার কোল্ডবক্সে টিকা সংরক্ষণ করা হয়েছে।
দেশে প্রথম পর্যায়ে গণটিকাদান শুরু হয়েছিল ৭ ফেব্রুয়ারি। শুরুতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত না করেই ৫৮ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষকে ওই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪৩ লাখ ৯৫ হাজার ২১৮ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও সিনোফার্মের টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৭১ হাজার ৮ জন। দুই ডোজ পেয়েছেন ২ হাজার ২৩৭ জন। ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ১ হাজার ৮৬৬ জন।