দেশের সিনেমা জগতে দুর্দিন শুরু হয়েছে অনেক আগেই। বছরে হাতেগোনা দু-একটি সিনেমা দর্শকপ্রিয়তা পেলেও বেশিরভাগই মুক্তি পায় নীরবে-নিভৃতে। দেশীয় ছবির টানে সিনেমা হলে নেই আগের সেই ভিড়। ফলে লোকসান গুনতে গুনতে সিনেমা হল বা প্রেক্ষাগৃহগুলোর বাতি নিভে যাচ্ছে। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হলো ময়মনসিংহের গৌরীপুরের এক সময়ের জনপ্রিয় সিনেমা হল ‘প্রিয়া’।
কদিন আগেও যেখানে ঝুলতো রং-বেরংয়ের পোস্টার,ব্যানার। সেখানে এখন ঝুলছে ‘ব্যাংক/গোডাউনের জন্য ভাড়া দেওয়া হবে’ শিরোনামের বিজ্ঞাপন।
জানা গেছে, গৌরীপুর পৌর শহরে দুটি সিনেমা হল ছিল। একটি ‘ঝলমল’ ও অপরটি ‘প্রিয়া’। তবে লোকসানের কারণে মালিক পক্ষ এক যুগ আগে ঝলমল সিনেমা হল বন্ধ করে দেয়। কিন্ত প্রিয়া চলছিল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। করোনা পরিস্থিতির পর প্রিয়া হলের প্রায় শো দর্শকশূন্য থাকত। সর্বশেষ কয়েক মাস আগে প্রিয়াতে ‘পরাণ’ সিনেমার প্রদর্শনী হয়। সিনেমাটির ব্যবসা না হওয়ায় মালিক পক্ষ হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে হল ভাড়ার বিজ্ঞাপন দেয় মালিক পক্ষ।
দেখা গেছে, প্রিয়া সিনেমা হলে ছবির কোনো পোস্টার নেই। তালাবদ্ধ হলের গেটের সামনে ইটের স্তূপ। প্রবেশপথে ঝুলছে ‘ব্যাংক বা গোডাউনের জন্য ভাড়া দেওয়া হবে প্রিয়া হল’এমন বিজ্ঞাপন। ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে হলের সামনে বড় পর্দা বসিয়েছেন স্থানীয়রা। হলে দর্শক না আসলেও খেলা দেখার জন্য ফুটবলপ্রেমীরা হলের সামনে ভিড় করেন।
প্রিয়া হলের মালিক নবী হোসেন বলেন, হলে আ
সন সংখ্যার ১০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয় না। বিদ্যুৎ বিল ও স্টাফের বেতন দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। এভাবে ক্ষতি করে ব্যবসা আর কত দিন করবো? কিন্তু কিছু একটা করে তো চলতে হবে। তাই আয়ের আশায় ভাড়া দেওয়ার বিজ্ঞাপন টাঙিয়েছি।
হলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ করিম বলেন, এক সময় প্রিয়া হলের ব্যবসা জমজমাট ছিল। তখন দিনে চারটা শোয়ের প্রদর্শনী হয়েছে। ঈদ কিংবা পূজা উৎসবে দর্শকরা ছবি দেখতে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছে। কিন্ত এখন হল দর্শকশূন্য থাকে। দিনে একটা শো চালাতে পারি না। সুদিনের আশায় থাকতে থাকতে আর টিকতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়েই ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা উদীচীর সভাপতি ওবায়দুর রহমান বলেন, প্রিয়া সিনেমা হল বন্ধের বিষয়টা একজন দর্শকপ্রেমী হিসেবে আমাদের কষ্ট দেয়। কিন্ত বাস্তবতা তো মেনে নিতে হবে। কর্তৃপক্ষ যদি হলে ভালো পরিবেশ ও আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করে হলটিতে সিনেপ্লেক্সের পাশাপাশি শপিংমল চালু করতো তাহলে হয়তো ব্যবসাটা ধরে রাখতে পারতো।
গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন, সিনেমা হল চালানোর জন্য বাণিজ্যিক ধারার নতুন সিনেমা এবং মাসে অন্তত একটি ব্যবসা সফল সিনেমা প্রয়োজন। কিন্তু সে হারে নতুন সিনেমা তৈরি হচ্ছে না। এক সময় প্রিয়া হলে নতুন ছবির প্রদর্শনী হলেই দর্শকরা পোস্টার ও ছবি দেখতে ভিড় করতেন। কিন্তু এখন হলে ছবির পোস্টার নেই, ভাড়ার বিজ্ঞাপন শোভা পাচ্ছে।