বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ, এম, এম, নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে অষ্টম সংসদ নির্বাচনের সময়কার সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবি জানান।
বৈঠক শেষে কুমিল্লার প্রতিনিধি বিএনপির সাবেক সাংসদ উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ১৯৮৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত যেভাবে নির্বাচনী আসন ছিল, আপনারা সেভাবে পুনর্বহাল করেন— এটা আমাদের সার্বজনীন দাবি।
তিনি বলেন, আমরা কমিশনের কাছে খসড়া তালিকা প্রকাশের জন্য আবেদন করেছি। নির্বাচন কমিশন আমাদের জানিয়েছে, তারা কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের আশা পূরণ হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলটি বৈঠক করেননি। আমরা বিভিন্ন আসন থেকে প্রতিনিধিরা এসেছি। আমাদের সবার দাবি হচ্ছে ২০০১ সালের সীমানা অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করা।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ২০০১ সালে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, যেভাবে আমরা আসনভিত্তিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম, এবারও ঠিক সেভাবে এলাকাভিত্তিক আসনগুলো যেন পুনর্বিন্যাস করা হয়। এ ব্যাপারে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার, সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও আশ্বস্ত করেছেন অনৈতিকভাবে আসন বণ্টন হবে না, জনগণের চাহিদা মোতাবেক আসন বিন্যাস করে উপহার দেবে। বিএনপি এ নেতা মুন্সিগঞ্জের প্রতিনিধি হিসেবে ইসির সঙ্গে বৈঠক করেন। আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন পুনর্বিন্যাস করলে এ নির্বাচন কমিশনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে না বলে জানান তিনি।
এর আগে হোমনা ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-২ আসনটি আগের মতোই রাখার দাবিতে নির্বাচন ভবনের সামনে মানববন্ধন করে একদল লোক। মানববন্ধনে আগত ছয় নং নিলখী ইউনিয়ন পরিষদ যুবদলের আহ্বায়ক রাসেল মাহমুদ জানান, ১৯৫৪ সাল থেকে হোমনা-মেঘনা এক আসনেই ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের তৎকালীন নির্বাচন কমিশন এটি আলাদা করে। ২০১৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত সেভাবেই ভোট হয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে কুমিল্লা-২ আসনটি ফের আগে মতো করা হয়। অর্থাৎ হোমনা-মেঘনাবাসী পুনরায় এক আসনে চলে আসে। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই আবার ২০০৮ সালের অবস্থায় ফিরে যেতে চাই। তাই আমরা সেটা যাতে না করা হয় সেজন্য এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। কুমিল্লা-২ আসনে হোমনা-মেঘনা বহাল রাখার আবেদন করেছি।
বদিউল আলম মজুমদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও ২০০৮-২০২৩ সালের সীমানা নির্ধারণে বিতর্কের বিষয়টিও তুলে ধরেছে।সংস্কার কমিশন বলেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিশেষ কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাপকভিত্তিক সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ করা হয় ২০০৮ সালে। এসময় জাতিসংঘের সহায়তায় একজন আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণ বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ দিয়ে একটি গবেষণা করা হয়, যদিও ওই গবেষণার সব পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন সীমানা সংক্রান্ত সংশোধন অধ্যাদেশ হাতে পাওয়ার পর কাজও শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ৭৫টি আসনের ছয় শতাধিক আবেদনও জমা পড়েছে। সংসদীয় এলাকার জিআইএস (জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম) সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ উপাত্ত না পাওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ইসি।
গত ১৯ জুন কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, সময়ের অভাবে এবং কিছু উপাত্ত এখনও বাকি থাকায় আলোচনাটা আজ আমরা এগিয়ে নিতে পারিনি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ সংসদীয় আসনের বিষয়টা সম্পন্ন হবে।
ইসির সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৭৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণ মোটামুটি একই পদ্ধতিতে হয়। ২০০৮ সালে সীমানা নির্ধারণে জনসংখ্যার ঘনত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। নবম সংসদ নির্বাচনের সময় কোনো জেলার আসনসংখ্যা দুটির কম হবে না, পার্বত্য তিন জেলায় একটি করে এবং ও ক্ষুদ্র জেলা মেহেরপুরে দুইটি আসন বরাদ্দ রাখা হয়। ঢাকায় ১৩টি থেকে আসন হয় ২০টি। ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। দুই বছরের সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ব্যাপক সংস্কার আনা হয় নির্বাচনী সব আইনে। এ ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত রয়েছে।