করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মডার্না ও চীনের সিনোফার্ম থেকে এক রাতেই দেশে এসেছে সাড়ে ২২ লাখ টিকা। শুক্রবার (২ জুলাই) রাতে পৃথক ফ্লাইটে এ দুই কোম্পানির টিকা দেশে পৌঁছায়।
শুক্রবার (২ জুলাই) রাত ১১টা ২১ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে-৫৮৪ ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মডার্নার সাড়ে ১২ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসে পৌঁছায়। আরও সাড়ে ১২ লাখ টিকা শনিবার সকালে দেশে এসে পৌঁছাবে। বিশ্বজুড়ে টিকা সরবরাহের আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে এসব টিকা পাঠানো হয়েছে। মডার্নার টিকা নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসের চারটি টিকা এল।
দেশে টিকা আসার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ। তিনি বলেন, রাত ১১টা ২১ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মডার্নার সাড়ে ১২ লাখ ডোজ টিকা এসে পৌঁছেছে। টিকা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনসহ অনেকে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে চীনের সিনোফার্ম থেকে বাংলাদেশ সরকারের কেনা ২০ লাখ ডোজের মধ্যে ১০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসে পৌঁছেছে। শুক্রবার (২ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় টিকার চালানটি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান। তিনি বলেন, একটি বিশেষ ফ্লাইটে সিনোফার্মের ১০ লাখ ডোজ টিকা রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে। বাকি টিকা সকালে আসার কথা রয়েছে।
গত ১২ মে প্রথমবার সিনোফার্মের তৈরি পাঁচ লাখ উপহারের টিকা বাংলাদেশে পাঠায় চীন। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত ১৩ জুন আরও ছয় লাখ টিকা উপহার হিসেবে পাঠায় চীন। সব মিলিয়ে ১১ লাখ টিকা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছে চীন। আর এই প্রথম চীন থেকে বাণিজ্যিকভাবে কেনা টিকা বাংলাদেশে এসেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে মডার্না এবং সিনোফার্মের মিলিয়ে মোট ৪৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসছে। এ সময় তিনি দেশে টিকার সংকটকালে একসঙ্গে এতগুলো টিকা আসার খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। দেশব্যাপী গণটিকা কার্যক্রম প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, আমরা টিকার জন্যই অপেক্ষা করছি। ৪৫ লাখ ডোজ টিকা হাতে পেলেই আমরা আগের মতো টিকা কর্মসূচি শুরু করতে পারব।
২৭ জুন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর দেশে মডার্নার টিকার জরুরি ব্যবহারে অনুমোদন দেয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে টিকাটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর জানিয়েছে, মডার্নার টিকা ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সীদের দেওয়া যায়। প্রত্যেককে এই টিকার দুই ডোজ করে দিতে হয়। টিকাটির প্রথম ডোজ নেওয়ার চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে। মাইনাস ১৫ থেকে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ টিকা সংরক্ষণ করতে হয়। টিকাটি ব্যবহারের আগে ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩০ দিন এবং ৮-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।
মডার্নার এই টিকা গত ২২ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে। এর আগে গতবছরের ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ এবং ৬ জানুয়ারি ইউরোপিয়ান মেডিসিন অথরিটির অনুমোদন পায় টিকাটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মডার্নার টিকা করোনার বিরুদ্ধে ৯৪ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর। বাংলাদেশে এই টিকার স্থানীয় প্রতিনিধি এমএনসি অ্যান্ড এএইচ, স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।