জামালপুরে গ্রাম্য সালিসিতে দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা না পেয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৭ পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। এ ঘটনায় শনিবার (১৪ জুন) জামালপুর সদর থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো. আতিক। এর আগে গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাদের সমাজচ্যুত করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার জামালপুর পৌর শহরে দাপুনিয়া এলাকার মো. মন্টু মিয়া (৪২) ও একই এলাকার আহাম্মদ আলীর ছেলে মো. মুনছুর মিয়ার (৪৫) বিদ্যুতের লাইন নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর উভয়পক্ষের মধ্যে আবারো হাতাহতির ঘটনা ঘটে। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে দাপুনিয়া পশ্চিমপাড়া বকুলতলা মোড়ে সালিসি বৈঠকের আয়োজন করে। সালিসে বিষয়টি মিমাংসার জন্য স্থানীয় শামিম আহমেদ ও আমিনুল ইসলামসহ কয়েকজন মুনছুর মিয়ার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। ৫০ হাজার টাকা না দেওয়ায় ও মুনছুর মিয়ার আত্মীয়সহ ৭ পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হবে বলে জানান শামিম আহমেদ ও আমিনুল ইসলাম। পরে মুনছুর মিয়া দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা না দিলে ওই রাতেই ১১টার দিকে মাইকিং করে ৭ পরিবারের নাম উল্লেখ করে তাদেরকে সমাজচ্যুত করা হয়। মাইকে আরও বলা হয় ওই ৭ পরিবারের সঙ্গে যদি সমাজের কোনো মানুষ ওঠা-বসা করে তাহলে তাদেরকেও সমাজচ্যুত করা হবে। মসজিদ, দোকান, স্কুল, বাজার, ও প্রকাশ্যে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে দেখলে ওই ৭ পরিবারের মানুষ ও ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
ইসমাইল মৌলবীর ছেলে মৌকির হোসেন বলেন, মন্টু মিয়ার সঙ্গে মুনছুর মিয়ার ঝামেলা হইছে। আমরা তাদের গোষ্ঠীর লোক হওয়ার কারণে অযথা আমাদেরকেও সমাজচ্যুত করা হয়েছে। আমরা ভয়ে কোথাও যেতে পারছি না।
ভুক্তভোগী জহুরুল ইসলাম আনন্দ বলেন, মাইকে ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে দোকানদাররা আমাদের কাছে কোনো কিছু বিক্রি করছে না। ছোট বাচ্চারা দোকানে গেলেও তাদের কোনো খাবার কিনতে দেওয়া হচ্ছে না। এখনো বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী সমাজের লোকজন আজ রাতে বিষয়টি নিয়ে মিমাংসা করার কথা।
থানায় অভিযোগকারী ইসমাইল মৌলবী বলেন, টাকা না দেওয়ায় আমাদের ৭ পরিবারকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সমাজচ্যুত করেছে। তারা মাইকে বলেছে, ৭ পরিবারের মানুষ মসজিদ, দোকান, স্কুল, বাজার, ও প্রকাশ্যে রাস্তাঘাটে চলা ফেরা করতে দেখলে মানুষ ও ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে।
এ ঘটনায় মন্তব্য নেওয়ার জন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো. আতিক বলেন, অভিযোগ পেয়ে ওই এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। উভয় পক্ষ একই এলাকার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।