গত ৫ এপ্রিল গুজব ছড়িয়ে ফরিদপুরের সালথায় সহিংসতার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া এক আসামি পুলিশের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় মারা গেছেন। এ ঘটনার তদন্ত করেছে পুলিশ। চার সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বলছে, এ মৃত্যুর সঙ্গে পুলিশের কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের সম্পর্ক নেই।
রোববার বিকেলে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ হেফাজতে আসামির মৃত্যুর ঘটনায় প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান। এসময় পুলিশ সুপার বলেন, শনিবারের ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশাকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছিলাম। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা আসামি আবুল হোসেনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আবুল হোসেন মোলতার মৃত্যুর সঙ্গে পুলিশের কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের সম্পর্ক নেই। এ ঘটনায় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এএসআই রমজান খন্দকার বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ সুপার বলেন, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন করা হয়েছে। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে তার ভাতিজা ইয়াদ আলীর কাছে মরদহেটি হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সালথার সহিংসতার ঘটনায় মোট নয়টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩৭০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও তিন থেকে চার হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাগুলোতে মোট ১০৭ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুনীল কুমার কর্মকার বলেন, আবুল হোসেন মোলতার রিমান্ড চলছিল। তিনি সেহরি শেষে ভোর সোয়া ৫টার দিকে শৌচাগারে যান। অনেকক্ষণ ধরে তার কোনো সাড়া-শব্দ না পাওয়ায় নিরাপত্তারক্ষী দরজা খুলে দেখেন, তিনি মেঝেতে পড়ে আছেন। তাকে দ্রুত ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালটির চিকিৎসক মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, পুলিশ আবুল হোসেন মোলতাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার শরীরে দৃশ্যমান কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। তবে এ ঘটনায় হত্যার অভিযোগ তুলেছে মোলতার পরিবার। মোলতার মেয়ে তানিয়া আক্তার বলেন, আমার বাবা সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত ছিল না, স নির্দোষ ছিল। গ্রামে কোনো রাজনীতি করত না। তাকে অন্যায়ভাবে আসামি করা হয়েছিল। এখন তাকে রিমান্ডে নিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার পরিবার বিষয়টির ন্যায় বিচার দাবি করছে। গুজব ছড়িয়ে গত ৫ এপ্রিল রাতে সালথা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সরকারি অফিসে তাণ্ডব চালায় কয়েক হাজার উত্তেজিত জনতা। এসময় দুটি সরকারি গাড়িসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। এতে প্রায় আড়াই কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে।