মোদিবিরোধী বিক্ষোভ, সমাবেশ ও সংঘর্ষে গত দুদিনে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনার জেরে হরতাল ডেকেছে হেফাজতে ইসলাম। হরতালকে কেন্দ্র করে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত সদস্যদের কঠোর অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।
শনিবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দফতর থেকে এ সংক্রান্ত বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে ডিএমপি ও পুলিশ সদর দফতরের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। নির্দেশনায় চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের ওপর হামলার আশঙ্কায় ডিএমপিসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানেও থাকতে বলা হয়।
সূত্র জানায়, হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতের লক্ষ্যে পুলিশ ও র্যাব সদর দফতরে পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও সদস্যদের নিজেদের নিরাপত্তার নিশ্চিতের পাশাপাশি দেশের জানমাল, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় কঠোর অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।
অতিরিক্ত ডিআইজি পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাদরাসা শিক্ষার্থী, শিশু শিক্ষার্থীদের হরতালে অংশ নেওয়া থেকে নিবৃত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারি ও রাষ্ট্রীয় সব স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ঘটনার পর পুলিশের সব ইউনিটকে বিশেষ করে হেফাজত অধ্যুষিত জেলা শহরে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত কয়েকদিনে কূটনৈতিকদের নিরাপত্তাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মাঝে কয়েকদিন বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাসহ বেশ কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। আমরা টেকনিক্যাল কিছু কারণে সেগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে পারিনি। সেগুলোর চেয়ে কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম। তবে আগামীকাল (রোববার) থেকে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, যারা এই হরতালের নামে বিক্ষোভ, মিছিল সমাবেশের নামে নাশকতার চেষ্টা করবে, জ্বালাও-পোড়াও করবে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। কেউ যদি যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে, জানমালের ক্ষতির চেষ্টা করে, থানায় হামলা বা আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন তবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মনে রাখতে হবে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে র্যাব সদর দফতর সব ব্যাটালিয়নকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি র্যাব সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। কেউ হরতালের নামে সহিংসতা করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে শুক্রবার ডিএমপি কন্ট্রোল রুম থেকে রাজধানীতে কর্মরত আটটি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) এবং সহকারী পুলিশ কমিশনারদের (এসি) সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, ডিএমপির থানাগুলোয় পুলিশ ফাঁড়ি ও পুলিশ বক্সে যেকোনো সময় হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য এসব স্থানে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি বাড়াতে হবে। এছাড়া যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর জন্য শুক্রবার রাত থেকে পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থায় থাকতে বলা হয়।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা ও মুখপাত্র পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাহিদা মোতাবেক সারাদেশে পর্যাপ্তসংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।