শুক্রবার (১৪ মে) দেশজুড়ে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মসজিদগুলোতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ঈদের দিনও রাস্তায় নেমেছেন সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশজুড়ে দূরপাল্লার বাস চালু করার দাবিতে ঈদুল ফিতরের দিন রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
ঢাকা
দেশের উত্তরাঞ্চলের বাস টার্মিনাল রাজধানীর মহাখালিতে ঈদের জামাতের পরপরই সকাল ১০টায় শ্রমিকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন। রাজধানীর অপর টার্মিনাল সায়েদাবাদেও অবস্থান নেন সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা ও নগর বাস টার্মিনাল শ্রমিক কমিটির সদস্যরা। সেখানে ঢাকা মহানগর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি হাজি মো আলী সুবা।
কর্মসূচিতে অংশ নেয়া নেতারা বলেন, করোনায় লকডাউনে মার্কেট, শপিংমলসহ সব কিছু খুলে দেয়া হয়েছে। সব পরিবহন চলছে। ফেরিতে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করছে। ভিড়ে পদদলিত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু গণপরিবহন চালুর ক্ষেত্রে নানা টালবাহানা চলছে। এই অবস্থায় কর্মহীন হয়ে পরিবহন শ্রমিকরা না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
রাজশাহী
ঈদের দিনে রাজশাহীতে দূরপাল্লার বাসচালুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। বেলা ১২টার দিকে রাজশাহীর শিরোইল বাস টার্মিনালে মালিক শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী বলেন, বাস বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের জন্য ঈদ আনন্দের নয়। এভাবে চলতে থাকলে শ্রমিকরা না খেয়ে মারা যাবে। অনতিবিলম্বে সরকারের দূরপাল্লার বাস চালু করা উচিত।
বগুড়া
দূরপাল্লার গণপরিবহন চালুসহ পাঁচ দফা দাবিতে বগুড়ায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলার সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক যৌথ কমিটি অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরের চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে যৌথ কমিটির সভাপতি শামসুদ্দিন শেখ হেলালের সভাপতিত্বে ওই কর্মসূচি পালন করা হয়। অবস্থান কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম, আকতারুজ্জামান ডিউক, তৌফিক হাসান ময়না, শফিকুল ইসলাম, খোরশেদ আলম, বাবর আলী মোল্লা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরায় ঈদের নামাজের পর বাংলাদেশ বাস, ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও শ্রমিক ফেডারেশনের সাতক্ষীরা জেলা শাখা যৌথভাবে শহরের পশু হাসপাতালের সামনে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কে এ কর্মসূচি পালন করে। পরিবহন মালিক সমিতি সাতক্ষীরার সভাপতি একে ট্রাভেলের এমডি তাহমিদ সাহেদ চয়নের সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুর রহমান, ট্রাক শ্রমিক ইউনয়নের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহাঙ্গীর হোসেন শাহিন, এসপি গোল্ডেন পরিবহনের মালিক জুনায়েদ হোসেন লস্কার বায়রন, হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার সরদার মুকুল প্রমুখ।
জয়পুরহাট
আন্তঃজেলা বাস চলাচলের অনুমতি দেয়ার দাবিতে ঈদের দিনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন জয়পুরহাট জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা। শুক্রবার (১৪ মে) বেলা ১১টায় শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চত্বরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় জয়পুরহাট জেলা বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আনিছুর রহমান লিটন, জয়পুরহাট জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম. সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
গোপালগঞ্জ
পাঁচ দফা দাবিতে গোপালগঞ্জে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বাস-ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা। জেলা বাস-ট্রাক মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করে। জেলা শহরের বেদগ্রাম বাস টার্মিনালের সামনে ঢাকা-খুলনা সহাসড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন মালিক ও শ্রমিকরা। এসময় তারা পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে বিভিন্ন ধরনের লেখা-সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। মানববন্ধন চলাকালে শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শেখ মো. বুলবুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী সাঈদ, শমিকনেতা সরু মোল্যা, ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আল আমিন মোল্যা, সাধারণ সম্পাদক মিচু কাজী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। দুপুরে পৌর বাস টার্মিনালে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. ফজলুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সজিব আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেলা মটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায়, অ্যাডভোকেট সামছু মিয়া চৌধুরী, আবু মঈন চৌধুরী সোহেল প্রমুখ।
পরিবহন মালিক শ্রমিকদের ৫ দফা দাবি
১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে মােট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার পরিবহনসহ সব গণপরিবহন এবং স্বাভাবিক পণ্যবাহী পরিবহন চলাচলের সুযোগ দিতে হবে।
২. লকডাউনের কারণে কর্মহীন সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের ঈদের আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা দিতে হবে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মালিকদের যানবাহন মেরামত, কর্মচারী ও শ্রমিকের বেতন, ভাতা ও ঈদ বােনাস ইত্যাদি দেয়ার জন্য নামমাত্র সুদ ও সহজ শর্তে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিতে হবে।
৩. সারাদেশে বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলােয় পরিবহন শ্রমিকদের জন্য ঈদের আগে ও পরে ১০ টাকায় ওএমএসের (খোলাবাজার) চাল বিক্রির ব্যবস্থা করা।
৪. কোভিড-১৯ এর কারণে গণপরিবহন ব্যবসায় অর্থ বিনিয়ােগের বিপরীতে সব ব্যাংক ঋণ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদ মওকুফসহ কিস্তি চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা। পাশাপাশি দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে শ্রেণিকৃত ঋণগুলো নিয়মিত করার সুযোগ দিতে হবে।
৫. লকডাউনে বন্ধ থাকার সময় গাড়ির ট্যাক্স-টোকেন, রুট পারমিট ফি, আয় করসহ সব ধরনের ফি, কর ও জরিমানা মওকুফ করে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত কাগজপত্র হালনাগাদের সুযোগ দিতে হবে।