সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) এস এম শফিউদ্দিন আহমেদসহ সাবেক তিন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি’তে অভিযোগ জমা পড়েছে। অন্য দুই সেনা কর্মকর্তা হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন ও মেজর জেনারেল (অব.) মো. সারোয়ার হোসেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) এম সারোয়ার হোসেন গতকাল রোববার এই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। তিনি আজ সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অভিযোগে তিনি নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া গুমের ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে গুমসংক্রান্ত কমিশনের কমিশনার ও কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু অভিযোগ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে।
অভিযোগ দাখিলকারী আইনজীবী সারোয়ার হোসেন সাবেক তিন সেনা কর্মকর্তাকে স্বৈরাচারের দোসর, গুম–খুনের হোতা, গোপন বন্দিশালা (আয়নাঘর নামে পরিচিতি পাওয়া) সৃষ্টিকারী ও রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে গুম করার উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর বেলা ১১টায় চা পানের কথা বলে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সদর দপ্তরে ডেকে নিয়ে যান। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলায় সেখানে তাঁকে গোপন বন্দিশালায় নেওয়ার ভয়ভীতি দেখানো হয়। যদিও ১১ ঘণ্টা আটকে রেখে তাঁকে ছেড়ে দেয়।
অভিযোগে সারোয়ার আরও বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কোনো সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। তিনি যেহেতু গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকারের কথা বলেন এবং ফ্যাসিস্ট শাসনের সমালোচনা করেন, সে জন্য ওই তিন সেনা কর্মকর্তা তাঁরা ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।
সাবেক সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন, মানবাধিকারবিরোধী অপরাধ এবং ২০২৪ সালে পাতানো নির্বাচনে সহযোগিতা করে গণতন্ত্র ধ্বংস করার অভিযোগ আনেন সারোয়ার হোসেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেনের বিরুদ্ধে সারোয়ার হোসেন ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডিজিএফআইতে চাকরির সময় অগণিত মানুষকে গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখা, কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পাতানো নির্বাচনে সহায়তা করে গণতন্ত্র ধ্বংস করা এবং পতিত স্বৈরাচারের অন্যতম দোসর হওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
মেজর জেনারেল (অব.) মো. সারোয়ার হোসেনের বিষয়ে আইনজীবী সারোয়ারের অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ডিজিএফআইয়ের পরিচালক থাকাকালীন তিনি গুম, খুনসহ নানাবিধ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ সংঘটিত করেছেন এবং সহযোগিতা করেছেন। তিনিও ছিলেন পতিত স্বৈরাচারের অন্যতম দোসর।