দেশে প্রতি বছর সাপের কামড় খেয়ে দেশে ৫ লাখ ৮১ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে অন্তত ৬ হাজার জনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল শেরাটনে ন্যাগলেগটেড ট্রপিক্যাল ডিজিস (এনটিডি) দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এই তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ ৮১ হাজার ৯১১ জন সাপের কামড়ের শিকার হন। তাদের মধ্যে অন্তত ৬ হাজার ৪১ জনের মারা যান। বর্ষা মৌসুমে সকাল ও সন্ধ্যায় সাপে কামড়ের ঘটনা বেশি ঘটে। অঞ্চলভেদে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ এলাকায় সাপের কামড়ের ঘটনা বেশি ঘটে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় কালাজ্বর কর্মসূচির সহকারী পরিচালক ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এমএম আক্তারুজ্জামান। তিনি জানান, সাপের কামড় বাংলাদেশে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা। তবে সাপে কাটলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। কারণ বাংলাদেশের বেশিরভাগ সাপই বিষহীন। দেশে মাত্র ৭ বা ৮ প্রকার বিষধর সাপ রয়েছে।
ডা. আক্তারুজ্জামান বলেন, সাপের কামড়ের আক্রান্ত স্থানের ওপরে বা নিচে কোনকিছু দিয়ে শক্ত করে বাঁধা যাবে না। তাতে আক্রান্ত-স্থানে পচন ধরে যেতে পারে। সাপে কামড় দিলে বরং মোটা কাপড় বা ব্যান্ডেজ দ্বারা প্যাঁচানো উচিত যাতে মাঝারি চাপ অনুভূত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সাপের কামড়ের ওষুধ পাওয়া যায়।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগের তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্বের ১৪৯টি দেশের প্রায় ১৭০ কোটি প্রান্তিক মানুষের জন্য ন্যাগলেগটেড ট্রপিক্যাল ডিজিজ (উপেক্ষিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগসমূহ) মারাত্মক হুমকি। এই রোগগুলো আক্রান্তদের অন্ধতা, মানসিক-শারীরিক বিকলাঙ্গতা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকৃতির মাধ্যমে শুধু স্বাস্থ্যহানি ঘটায় না। বরং তাদের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ কেড়ে নেয়। এমনকি পরিবার বা সমাজে বসবাস করা ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়।
আক্তারুজ্জামান আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাভুক্ত এনটিডিভুক্ত রোগের সংখ্যা ২০টি, তবে বাংলাদেশে ফাইলেরিয়াসিস, কালাজ্বর, কুষ্ঠ, কৃমি, জলাতঙ্ক, সর্পদংশন এবং ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া এই ৭টি রোগ প্রধান এনটিডি হিসেবে বিদ্যমান আছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি এনটিডি (কালাজ্বর ও কুষ্ঠ) নির্মূল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে, আরও দুটি রোগ (ফাইলেরিয়া ও জলাতঙ্ক) নির্মূল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে। তবে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া এবং সর্পদংশন নিয়ন্ত্রণে আমাদের অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ড. রোবেদ আমিন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (সিডিসি) ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাশেদা সুলতানা, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, মহাসচিব ডা. কামরুল হাসান মিলন প্রমুখ।