কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে বিবস্ত্র করে ছাত্রী নির্যাতনে জড়িত থাকার ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শনিবার (৪ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শাহাদাত হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ছাত্রীকে নির্যাতনের ওই ঘটনায় দুপুর ১২টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত উপাচার্যের দফতরে শৃঙ্খলা কমিটির সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম। সেখানে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা থেকে অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে হবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের চূড়ান্ত বহিষ্কার করা হবে।
সাময়িক বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- ইবির পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা (সেশন: ২০১৭-১৮), চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার উর্মি (সেশন ২০২০-২১), আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম (সেশন: ২০২০-২১), ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম (সেশন: ২০২০-২১) ও একই বিভাগের একই সেশনের মুয়াবিয়া জাহান। এর মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। বাকিরা ছাত্রলীগের কর্মী। নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে দুই দফায় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ওই ছাত্রীকে রাতভর র্যাগিং ছাড়াও শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে তার ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠে। এতে শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ছাত্রলীগ কর্মী তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, ইসরাত জাহান মিমি ও হালিমা খাতুন উর্মিসহ কয়েকজন জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর।
ওই ঘটনায় সেই ছাত্রীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও ঘটনাটিতে পৃথকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল ও শাখা ছাত্রলীগ। পাশাপাশি হাইকোর্টের নির্দেশেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। পরবর্তীকালে তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেলে সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, তাবাসসুম, হালিমা খাতুন উর্মি, ইশরাত জাহান মিমি ও মায়োবিয়ার সিট বাতিল করা হয়। সেই সঙ্গে তাদের স্থায়ীভাবে আবাসিকতা বাতিল করা হয়। এরপর আদালতের আদেশে আজ তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে নির্যাতনের শিকার ফুলপরি আজ শনিবার (৪ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তায় ক্যাম্পাসে যান। সেখানে গিয়ে তিনি অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার দাবি জানান। ফুলপর বলেন, ‘অভিযুক্তদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা না হলে পরবর্তীতে তারা আমার ক্ষতি করতে পারে। এজন্য তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ যেন এ ধরনের দুঃসাহস দেখাতে না পারে।’
এ সময় ফুলপরীর বাবা বলেন, ‘তারা আমার মেয়েকে মেরে ফেলাতে পারত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করব তারা যেনো আমার মেয়েকে নিরাপত্তা ও সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন। ফৌজদারি আদালতে এদের শাস্তি হওয়া উচিত। আমার মেয়ের মতো আর কাউকে যাতে নির্যাতনের শিকার হতে না হয় সেজন্য তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে।’