আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিদ্যমান সাক্ষ্য অইনের ধারা ১৫৫(৪) এর বিধান নারীর মানবাধিকারের বিরুদ্ধে বিধায় তা বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে যা নারীর মর্যাদাহানি রোধ করবে। মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন সংশোধন ও অধিকতর যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত গ্রহণের জন্য এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, এই সংশোধনী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ফ্যাসিলেটেড করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং সব আইনকে ফ্যাসিলেটেড করে বিশ্বায়নের বাস্তবতায় সঠিক সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে বিচারকার্য নিষ্পত্তি করা। বিগত লকডাউন এর সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ডিজিটাল প্লাটফরম ব্যবহার করে অন্যান্য সব কাজের মতো বিচারিক কার্যক্রমকেও চলমান রাখা হয়েছে। সাক্ষ্য আইনে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব বিধান রয়েছে। বাস্তবতা ও সময়ের চাহিদার কারণে উক্ত আইনে কিছু নতুন বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, ফৌজদারী কার্যবিধি বাংলা ভাষায় করা হলেও সাক্ষ্য আইন ইংরেজিতেই করা হবে। যুক্তিতে তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় ইতোপূর্বে কতিপয় আইন ইংরেজিতে থাকা প্রয়োজন মর্মে আলোচনা হয়েছে। সাক্ষ্য আইনসহ বিভিন্ন আইন প্রণয়নের পর তা আদালত কর্তৃক বিভিন্ন সময় প্রদত্ত রায়ের মাধ্যমে ব্যাখ্যাত হয়ে নজির আকারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ইংরেজিতে প্রণীত রাষ্ট্রপতির আদেশসমূহ এখনো বিদ্যমান রয়েছে। সাক্ষ্য আইনসহ এসব আইন বাংলায় নতুন করে প্রণয়ন করা হলে আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে ব্যবহৃত শব্দসমূহ পুনরায় ব্যাখ্যার প্রয়োজন হবে। সে কারণে, সাক্ষ্য আইন ইংরেজিতে থাকা সমীচীন হবে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক কো-অর্ডিনেটর মিয়া সেপো বলেন, সাক্ষ্য আইন সংশোধনের বিষয়টি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় একটি প্রশংশনীয় উদ্যোগ। ওই সংশোধনী মানবাধিকার উন্নয়নে সহায়ক হবে এবং সাক্ষ্য আইনের ধারা ১৫৫ (৪) সংশোধনের মাধ্যমে নারীর মর্যাদাহানির পুনরাবৃত্তি হবে না। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ায় এ সংশোধনী যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে জাতিসংঘ সর্বাত্মক সহায়তা করবে।
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সাওয়ার, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর, ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েস, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (সিআইড) ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আব্দুল্লাহ আবু প্রমুখ আইনটির বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন।