হত্যা মামলায় নাম আসা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে জাতীয় দল থেকে বাদ দিয়ে মামলার তদন্তের স্বার্থে দেশে ফিরিয়ে আনতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আজ এ নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ আলম। তিনি আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিনুর রহমানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বরাবর নোটিশটি পাঠান।
এই অবস্থায় জাতীয় দলে সাকিব থাকবেন কিনা, এই ব্যাপারে জরুরি সভাতে বসেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিবি। কিন্তু সভা শেষে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিসিবি।আজ দুপুরে দিকে সাকিবের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বিসিবি বৈঠক শুরু করে। যেখানে সভাপতি ফারুক আহমেদসহ বেশ কয়েকজন পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষ সংবাদ মাধ্যমকে বোর্ড সভাপতি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে যেহেতু টেস্ট ম্যাচ চলছে, কালকে পঞ্চম দিন। এই মুহূর্তে আমরা কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা চিন্তা করিনি। কালকের দিন শেষ হলে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেবো।’
এর আগে সাকিবের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া হত্যা মামলার তদন্তের স্বার্থে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কর্তৃপক্ষকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে শনিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ আলম বলেছেন, ‘সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে যেহেতু ক্রিমিনাল মামলা রেকর্ড হয়েছে, তাই আইসিসির আইন অনুযায়ী তিনি জাতীয় ক্রিকেট দলে থাকতে পারেন না। তাকে ক্রিকেট দল থেকে অবিলম্বে অপসারণ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে মামলার তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য এ নোটিশ প্রেরণ করেছি।’
যদিও বিসিবি জানিয়েছে, তারা কোনও নোটিশ পায়নি। এ ব্যাপারে ফারুক বলেছেন, ‘আপনি জানেন একটা মামলা হয়েছে। লিগ্যাল নোটিশটা আমরা পাইনি এখনও, ওটার ব্যাপারে বলতে পারবো না। মামলাটি এফআইআর হয়েছে, পরে তদন্ত হবে। তারপরে একটা দিকে যাবে মামলাটি।’
গত ৫ আগস্ট আদাবরের রিং রোডে বুকে ও পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মোহাম্মদ রুবেল নামে এক গার্মেন্টস শ্রমিক। রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার হত্যা মামলা করেন, যেখানে সাকিবকে ২৮ নম্বর আসামি করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১৫৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি আরও ৫০০ জন। মামলার এজাহার থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে সাকিবের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘যে কোনও মামলায় অপরাধীর সম্পৃক্ততা থাকে। আন্দোলনের বিরুদ্ধে যারা অর্থ, পরামর্শ ও মিডিয়াতে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন তাদের বিষয়ে তদন্ত হবে।’
বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলতে সাকিব এই মুহূর্তে আছেন পাকিস্তানে। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন শেষ হয়েছে আজকে। রবিবার পঞ্চম দিনের খেলা শেষে সাকিবের ব্যাপারে কোনও একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বিসিবির সভাপতি ফারুক, ‘এফআইআর যখন হয়, এটার বিরুদ্ধে কিন্তু চার্জ গঠন হয়নি। এর আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন। গত বেশ কিছু দিন আগে বিশাল গণ্ডগোল হয়েছে, অনেক প্রাণ ঝরে পড়েছে। সহমর্মিতা এখনও আছে আমাদের, আমরা কিন্তু ভুলে যাইনি। এই মুহূর্তে টেস্ট ম্যাচ চলছে। বিসিবির সঙ্গে সাকিবের সম্পর্ক খেলোয়াড় ও এমপ্লোয়ি হিসেবে।’
এরপরই ফারুক ফের জানালেন রবিবার টেস্টের পঞ্চম দিন শেষেই সাকিবের ব্যাপারে বড় কোনও সিদ্ধান্ত আসবে, ‘কালকের (রবিবার) দিনের পর সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। এই মুহূর্তে তার খেলতে বাধা নেই। আসলে ম্যাচের মাঝখানে তাকে প্রত্যাহার করতে পারবো না!’
ফারুকের কথাতেই স্পষ্ট, পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের পর সাকিবের বিরুদ্ধে হয়তো কঠিন কোনও সিদ্ধান্ত আসছে। মামলা থাকায় দ্বিতীয় টেস্ট তো বটেই, সামনে সাকিবের দেশের হয়ে খেলাটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে! যদিও মামলায় জড়ানো ক্রিকেটারদের সংখ্যা বাংলাদেশে কম নয়। এর আগে রুবেল হোসেন, আরাফাত সানি, শাহাদাত হোসেন রাজিব, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও নাসির হোসেনের নামেও মামলা হয়েছিল। তবে সেগুলো ছিল ধর্ষণ ও নিপীড়নবিষয়ক। কিন্তু এবার সাকিবের বিরুদ্ধে হলো হত্যা মামলা। এই জায়গাতে বিসিবি কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটিই দেখার।
তবে যে সময়টাতে সাকিবের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়, সেই সময়টাতে তিনি দেশেই ছিলেন না। তাই তো তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা শেষ পর্যন্ত টিকবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে! সাকিব যেহেতু জুলাইয়ের আগে থেকেই বাংলাদেশের বাইরে তাই কীভাবে চলবে মামলার কার্যক্রম, এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘যে কোনও মামলাতেই আইন অনুযায়ী এভিডেন্স (সাক্ষ্যপ্রমাণ) সংগ্রহ করা হবে৷ মামলা তদন্তে এভিডেন্স অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’