রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ’র সাইকেল লেনে সাইকেল নেই। অথচ আর সবই আছে। কেউ পার্কিং করেছেন প্রাইভেট কার, কেউ রেখেছেন মোটরসাইকেল। আছে সিএনজি, বাস ও পণ্যবাহী পিকআপ ট্রাকও। এমনকি খোদ পুলিশ বিভাগের চেকপোস্টের ব্যারিকেড জড়ো করে রাখা হয়েছে এই লেনের ওপর। রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ের সাইকেল লেন ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রায় একবছর আগে এই সাইকেল লেন উদ্বোধন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। গত ডিসেম্বরে লেনটি দখলমুক্ত করতে অভিযানও চালানো হয়। অভিযান শেষে ফের দখল হয়ে গেছে লেনটি। রনি মিয়া নামের একজন সাইকেলচালক বলেন, ‘এই লেনে তো সাইকেল চালানোর উপায় নেই। আমরা অনেক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। এখানে পার্কিং করা গাড়িগুলোর জন্য মূল রাস্তায় উঠতে হয় বারবার। তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।’
সাইকেল লেনে পার্ক করা একটি প্রাইভেট কারের চালক শাহীন ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘এইটা যে সাইকেল লেন, তা তো জানতাম না। কোনো লিখিত সাইনবোর্ডও নাই, আলাদা রঙও বোঝা যায় না। জানা থাকলে পার্কিং করতাম না।’ লেনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি সিএনজির চালক ফরিদ বলেন, ‘ফাঁকা জায়গা দেখে দাঁড়াইছি। সাইকেল তো অল্পই যায়। আর এখানে না দাঁড়াইলে দাঁড়ানোর জায়গাও তো নাই।’
আরেক মোটরসাইকেলের চালক রনি আহমেদ বলেন, ‘সাইড করেই দাঁড়িয়েছি। সাইকেল যাওয়ার জন্য যথেষ্ট জায়গা আছে।’ গাড়ি পার্কিং নিয়ে হকার রাজা মিয়া বলেন, ‘এমনই তো দেখছি প্রতিদিন। এখন তাও দুপুর দেইখ্যা গাড়ি কম। সন্ধ্যার মুহে রাস্তার এইমাথাত্তে হেইমাথা পর্যন্ত পুরাই গাড়ি রাহা থাহে।’
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির বলেন, ‘মূলত শিক্ষার্থীরাই সাইকেল চালান বেশি। এছাড়া, স্বাস্থ্য সচেতনরাও সাইকেলে চলাফেরা করেন। এখন সাইকেলের জন্য আলাদা লেন না থাকলে ব্যস্ত শহরে দুর্ঘটনা বাড়ার আশঙ্কা আছে। মানিক মিয়া এভিনিউয়ের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সরকারের প্রধান মনোযোগে আছেন প্রাইভেটকারের মালিকরা। সাধারণ মানুষের বাহন সাইকেল নিয়ে প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বের সব উন্নত দেশে সাইকেল লেন আছে। সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। কিন্তু দেশে সাইকেল লেন সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট আইন বা ঘোষণা নেই। যদি আইন করা হয় বা সিটি করপোরেশন নির্দিষ্ট ঘোষণা দিয়ে আমাদের জানায় তাহলে লেনে অবৈধ গাড়ি পার্কিং ঠেকানো পুলিশের পক্ষে সহজ হবে।’
ডিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ মোটা দাগে সচেতন নয়। যিনি সাইকেল লেনে পার্কিং করছেন, তিনি হয়তো বোঝেনই না, এই লেন কী জিনিস। এছাড়া আমাদের জনবলের অভাবও রয়েছে।’
উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সাইকেল লেন পুনরুদ্ধার করতে এর আগে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। আমাদের এলাকা ও কাজ এত বেশি যে, প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে একই জায়গায় অভিযান চালানো সম্ভব নয়। নির্দেশনা পেলে মানিক মিয়ায় ফের অভিযান চালানো হবে। তবে, অবৈধ পার্কিংয়ের ব্যাপারে পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ সাইকেল লেন বিষয়ে কথা বলতে উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামের মোবাইলে কল ও এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।