সফররত চীনের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল গতকাল (মঙ্গলবার) ঢাকায় বাংলাদেশের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসানের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ সংক্রান্ত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে দুদেশের আলোচনায় তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ‘টু’ শব্দও হয়নি।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং যৌথ নদী কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, চীনের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে পানি সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নে সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মূল বিষয় ছিল— ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ সংক্রান্ত সহযোগিতা।
যৌথ নদী কমিশনের তথ্য বলছে, সমঝোতার আলোকে বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে চীন তার ভূ-খণ্ডে অবস্থিত ইয়ালুং জাংবু নদের তিনটি স্টেশন; নুসিয়া, নাগেসা ও ইয়াংকানের বন্যা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত ২০০৬ সালের জুন মাস থেকে বাংলাদেশকে সরবরাহ করছে চীন।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে পানি সম্পদ সংক্রান্ত পাঁচ বছর মেয়াদি একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্মারকটি ২০১৪ সালের জুনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুদেশের পানি সম্পদ সচিব/ভাইস মিনিস্টার পর্যায়ের বৈঠকে পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করা হয়। এ সমঝোতা স্মারকের আলোকে তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ সংক্রান্ত বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ২০১৫ সালের মার্চে চীনে অনুষ্ঠিত দুদেশের মধ্যে এক বৈঠকে স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এরপর ২০১৭ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত পানি সম্পদ মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় দুদেশের সহযোগিতা বৃদ্ধিকরণের নিমিত্ত বন্যা প্রতিরোধ, খরা মোকাবিলা ও প্রতিরোধ এবং ভূমি ক্ষয় প্রতিরোধের বিষয়ে উভয়পক্ষ সম্মত হয়।
ইয়ালুজাংবু নদে অবস্থিত তিনটি স্টেশনের বন্যা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশকে সরবরাহ বিষয়ে ‘প্রিভেনশন অব হাইড্রোলোজিক্যাল ইনফরমেশন অব দ্যা ইয়ালুজাংবু/ব্রহ্মপুত্র রিভার ইন ফ্ল্যাড সিজনস বাই চায়না টু বাংলাদেশ’— শীর্ষক একটি সমঝোতা স্মারক ও এর বাস্তবায়ন পরিকল্পনা উভয়পক্ষ কর্তৃক পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করা হয়। ২০১৯ সালের ৪ জুলাই চীনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব স্বাক্ষরিত হয়।
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পানি সম্পদ সচিবের বৈঠকে বেইজিংয়ের প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনার গুঞ্জন ছিল। তবে বৈঠকে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান যৌথ নদী কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, তিস্তা প্রকল্প আমাদের কোনো এজেন্ডায় ছিল না। যার জন্য তারা কোনো প্রশ্ন করেনি আর আমরাও তুলিনি। এককথায় তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কোনো আলোচনায় হয়নি।
চীনের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল গত সোমবার থেকে বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। নয় সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন দেশটির পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রধান পরিকল্পনাকারী উ ওয়েনজিং। প্রতিনিধিদলটি আগামী শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবেন।
সফরকালে প্রতিনিধিদলটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সতর্কীকরণ সেন্টার, হাইড্রোলজিক্যাল স্টেশন, সেচ প্রকল্প এবং পদ্মা নদীর ঊর্ধ্বসীমা এবং নিম্নসীমা পরিদর্শনের কথা রয়েছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বলেন, পানি ইস্যুতে চীনের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করছেন। তাদের সঙ্গে মঙ্গলবার আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। বন্যা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সমঝোতা নবায়নের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের সঙ্গে কাজ করছে।
যৌথ নদী কমিশনের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতাটি নবায়ন করতে দুপক্ষই সম্মত আছে। চীনের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করছেন। আমরা এই মুহূর্তে তাদের সঙ্গে কাজ করছি।