বাংলাদেশের নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, আমরা আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতি মিলে যদি একসঙ্গে উদ্যোগ নেয় তাহলে বিচারাঙ্গনের দুর্নৗতি অপসারণ করা কোনো কঠিন কাজ হবে না। শতভাগ না পারলেও অনেকাংশে আমরা সফল হতে পারব। দুর্নীতি নিশ্চয় কমবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা সকলেই জিরো টলারেন্সে বিশ্বাস করি। তিনি দেশের সব মানুষের কাছে সহনশীল আচরণ প্রত্যাশা করেছেন। মঙ্গলবার দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর চ্যানেল 24’কে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
বিচার বিভাগ নিয়ে পরিকল্পনার বিষয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ আছে। বিচার প্রার্থী মানুষদের প্রতিদিন আমাদের আদালতের বারান্দায় ঘোরাফেরা করতে হয়। আপনারা জানেন বিপুল সংখ্যক মামলা আদালতে পেন্ডিং আছে। আমার পরিকল্পনা হবে যতদ্রুত সম্ভব মামলাজট কিভাবে কমানো যায় সে ব্যাপারে আমি সচেষ্ট থাকব। তবে একটি কথা বলতে পারি আমার পূর্বসূরী এখনও যিনি মাননীয় প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি অত্যন্ত সুন্দর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই উদ্যোগ অবশ্যই আমি অনুসরণ করব এবং এর আগেও যারা প্রধান বিচারপতি ছিলেন। যারা সুপ্রিম কোর্ট নিয়ে এখনও ভাবেন। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে আমি আমার সময়টা অতিবাহিত করব। এছাড়া আমার সঙ্গে আপিল বিভাগে যারা বিচারপতি আছেন তারা সবাই খুব দক্ষ বিচারক। তাদের সাথে পরামর্শ করে বিচারকাজ পরিচালনা করব।
আইনাঙ্গনের অনিয়ম-দূর্নীতি রোধে আপনার কেমন ভূমিকা থাকবে এ প্রশ্নের জবাবে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, দুর্নীতি বাংলাদেশে ক্যান্সারের মত। দুর্নৗতি শুধু বিচার বিভাগে নয়। বহু ক্ষেত্রেই আছে। এটা অস্বীকার করলে সত্যের অপলাপ হবে। আমি মনে করি আমরা সকলে মিলে আপিল বিভাগে আমরা যেকয়েকজন বিচারপতি আছি এবং সকলে মিলে যদি আমরা একসঙ্গে উদ্যোগ নেয় তাহলে এই দূর্নৗতি অপসারণ করা কোন কঠিন কাজ হবে না। শতভাগ না পারলেও অনেকাংশে আমরা সফল হতে পারব। দুর্নীতি নিশ্চয় কমবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা সকলেই জিরো টলারেন্সে বিশ্বাস করি।
দুর্নীতি কমানোর জন্য যেসকল ব্যবস্থা যে সকল ব্যবস্থা নেওয়া হবে প্রয়োজনে গণমাধ্যম কর্মৗদের সাথেও কথা বলে ঠিক করব। সাংবাদিকরা সমাজের প্রতিবিম্ব। আপনারা যে রিপোর্ট করেন সেই রিপোর্টের মাধ্যমে মানুষ জানতে পারে কোথায় দূর্নীতি হচ্ছে। সাংবাদিকদের সহযোগিতা লাগবে। আমি বারবার বলছি আমার কলিগদের সাথে কথা বলে পরামর্শ করে কাজ করব। বিচার বিভাগে আমি যতদিন আছি দুর্নৗতি রোধ করা,দূর্নীতি হ্রাস করা এবং মামলাজট নিরসনে কাজ করে যাব।
আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনজীবীদের কাছে আশা করব আদালতের প্রতি তারা যেন যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেন। আদালতের কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তারা যেন অফিসার অব দ্যা কোর্ট হিসেবে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে।আমি যেহেতু আইনজীবী ছিলাম সেহেতু আমি জানি অনেক ভাল আইনজীবী আছেন যারা বিচার বিভাগ নিয়ে চিন্তা করে। আমি প্রয়োজনের তাদের সাথেও কথা বলে বিচার বিভাগের কল্যাণের জন্য কাজ করব।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেছেন। এই নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস, এমএসএস ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৬ সালে জেলা আদালত, ১৯৮৮ সলে হাইকোর্ট বিভাগ এবং ২০০৫ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৯ সালের ৩০ জুন তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০১১ সালের ৬ জুন স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এরও চেয়ারম্যান ছিলেন।