সরকারের ভেতরে আওয়ামী দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান।
শনিবার (১২ জুলাই) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ (যাত্রাবাড়ী-ডেমরা অঞ্চল) উদ্যোগে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের’ সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, এই দোসররা সরকারের ভেতরে এবং বাইরে নানারকম ষড়যন্ত্র করছে। তাদের ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচতে হলে সরকারকে কঠোর হতে হবে। রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ফেরাতে আওয়ামী দোসরদের অপসারণ করতে হবে।
সভায় প্রদান করা ভাষণে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ফেরাতে আওয়ামী দোসরদের অপসারণ করার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের এ কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, প্রশাসনে সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিকদের দায়িত্ব দিতে হবে। তবেই জুলাইয়ের চেতনা বাস্তবায়নে সরকার কাজ করতে পারবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রায় ১ বছর রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকলেও জুলাইয়ের চেতনার প্রতিফলন না হওয়ার অন্যতম কারণ সরকারের ভেতরের আওয়ামী দোসর। জুলাইয়ের চেতনা বাস্তবায়নে কাজ করতে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আগে আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে দেশের মালিক মনে করতো; আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার পর এখন আরেক দল নিজেদেরকে দেশের মালিক মনে করা শুরু করেছে। তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা সারাদেশে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজি, খুনাখুনি করে যাচ্ছে। তাদের কর্মকান্ডে জাতি অস্বস্তি আর আতঙ্কে রয়েছে।
‘জনগণ রুখে দাঁড়ালে চাঁদাবাজদের রক্ষা নেই’ উল্লেখ করে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশের কোন ইসলামী দল চাঁদা দাবি করে না, আওয়ামী লীগও পলাতক, তাহলে চাঁদা আদায় করে কে- তা জনগণ জানে। আলাদা করে বলতে হবে না কে চাঁদাবাজ। যারা চাঁদাবাজি করে, তারা ভাগাভাগি নিয়ে নিজেরা-নিজেরাই নিজ দলের নেতাকর্মীকে খুন করতেছে।
তিনি বলেন, ভারতীয় সেবাদাস আওয়ামী সরকার মানুষকে খুন, গুম করে জুলুম, নির্যাতন চালিয়ে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে। জনগণ ছাত্রদের নেতৃত্ব আওয়ামী জুলুমের বিরুদ্ধে যেভাবে রাস্তা নেমে আসার পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতা রেখে গোষ্ঠীসহ পালিয়েছে। একইভাবে জনগণ চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামলে চাঁদাবাজদেরও পালিয়ে যেতে হবে।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জুলাই যোদ্ধাদের জাতীয় বীর উপাধি দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেও ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে পারেনি। কারণ আওয়ামী লীগ বিরোধী দলমত রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে দমন পীড়ন করেছে। কিন্তু ছাত্রদের নেতৃত্বে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণে জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়। জাতি ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্ত হয়। ছাত্র-জনতা গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে জীবন ও রক্ত দিয়েছে। তাই ছাত্র-জনতার সাহসিকতার মর্যাদা রাষ্ট্রকে দিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জুলাই-আগস্ট বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আমরা সেই লক্ষ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, এতিম ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণসহ নানামুখী কর্মসূচি পালন করে আসছি।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের দিনগুলো স্মরণ করে তিনি বলেন, শহীদ ও আহতদের আকাঙ্ক্ষা এড়িয়ে গিয়ে সংস্কারের আগে, গণহত্যার বিচার নিশ্চিত না করে নির্বাচন দিলে জনগণ সেই নির্বাচন মেনে নেবে না। কারো রক্তচক্ষু কিংবা কোনো চাপে সংস্কার, গণহত্যার বিচার নিশ্চিত না করে নির্বাচনের দিকে গেলে নতুন করে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে এজন্য তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সকল গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করণ, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের ও আহতদের পুনর্বাসন এবং জুলাই সনদ ঘোষণার দাবি জানান।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকিরের সভাপতিত্বে এবং যাত্রাবাড়ী মধ্য থানা আমির অ্যাডভোকেট এ কে আজাদের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মহানগর সহকারী সেক্রেটারি ও ঢাকা-৫ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মোহাম্মদ কামাল হোসেন, শহীদ আসলামের বোন শারমিন আক্তার, জুলাই যোদ্ধা (আহত) মোহাম্মদ ইউসূফ, শহীদ মাহাদী হাসানের বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন, শহীদ নুর হোসেনের মা নুরুন্নাহার বেগম, জুলাই যোদ্ধা (আহত) শাহ আলম, শহীদ মুনতাসীর রহমানের বাবা সৈয়দ গাজিউর রহমান, ঢাকা-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিচালক ও মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, যাত্রাবাড়ী পশ্চিম জোনের পরিচালক মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য সৈয়দ সিরাজুল হক, যাত্রাবাড়ী থানা আমির অধ্যক্ষ সাদিক বিল্লাহ প্রমুখ।
সভায় আহত জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা বলেন, দেশ ও জাতিকে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্ত করতে জীবন ও রক্ত দিতে হয়েছে। ফ্যাসিবাদ মুক্ত নতুন বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১১ মাসেও জুলাই সনদ ঘোষণা করতে পারেনি, গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি, শহীদ পরিবারকে এবং আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের পুনর্বাসন করতে পারেনি। যা বেদনাদায়ক। তাই অনতিবিলম্বে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে ও ফ্যাসিবাদের পথ বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র সনদের দাবি জানান তারা।