সরকার পতনের আন্দোলনে অংশ নিতে যশোরবাসীকে আমন্ত্রণ জানাতে এসেছেন জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘এই সরকারের পদত্যাগ কিংবা অপসারণ সময়ের ব্যাপার মাত্র। আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে ভয় কেন? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তারা বলে, বিএনপি সরকারে আসলে নাকি এক রাতে আওয়ামী লীগ শেষ করে দেবে। আমরা তো লাঠি, দা, কাঁচি নিয়ে বসে নাই। আমরা দেশকে মুক্ত করতে চাই আপনাদের হাত থেকে।’
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে খুলনা বিভাগের বিএনপির রোড মার্চে যশোর-খুলনা মহসড়কে মুড়লী মোড়ে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির রোডমার্চে যশোরে পথসভায় মানুষের ঢল নামে। পথসভা রূপ নেয় জনসভায়। সকাল থেকেই সেখানে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী। বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সেখানে জড়ো হন তারা। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যানার ও স্লোগানের মাধ্যমে খণ্ড খণ্ড মিছিল সহকারেও অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দেন নেতাকর্মীরা।
অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির লক্ষ্যে এক দফা দাবি আদায়ে বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ঝিনাইদহ-মাগুরা-যশোর থেকে খুলনা পর্যন্ত বিএনপি রোডমার্চ করে।
দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে হলে খালেদা জিয়ার মুক্তি দরকার মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা, মায়েরা, বোনেরা, যারা বাড়ি থেকে শুনছেন, আপনারা কেউ ঘরে বসে থাকবেন না। যদি ঘরে বসে থাকেন, তাহলে কিছুই হবে না। যদি আপনারা অংশগ্রহণ না করেন, তাহলে এই শেখ হাসিনা সরকারকে কখনোই ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। তাদের হাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, তাদের হাতে কোর্ট আছে। সুতরাং আমরা সকল কিছু ছাপিয়ে, সকল কিছুকে প্রতিরোধ করে দেশকে মুক্তির আলো দেখাব ইনশাল্লাহ।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘হামলা-মামলা করে সরকার পতন আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। মৃত্যুর জন্য চিন্তা করি না। মরণের জন্য যখন রাস্তায় নেমেছি তখন কেউ আমাদের চলমান আন্দোলন বন্ধ করতে পারবে না।’
রাজধানীর ধোলাইখালে নিজের ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর বলেন, ‘সেই দিন তো আমার ওপর বন্দুক ধরেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, মারতে পারেননি। বেঁচে আছি। গুলি করে কী আন্দোলন বন্ধ করতে পেরেছেন?’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে গয়েশ্বর বলেন, ‘আপনাদের কাজ হচ্ছে চোর-ডাকাত ধরা। আমাদের পাহারা দেওয়ার আপনাদের দায়িত্ব নয়। যেদিন ঝামেলা করব সেদিন বলে, কয়ে করব।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘এক দফার মাধ্যমে দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের পতন ঘটানো হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দিন। মিথ্যা মামলায় বন্দী করে রাখবেন না। মনে রাখবেন, খালেদা জিয়াকে যেখানে বন্দী করে রেখেছেন আগামীতে আপনার স্থান হবে সেখানে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে বিএনপি। আর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াই হবেন প্রধানমন্ত্রী- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি। সামনে সুখবর আছে। এরপরের সরকার হবে বিএনপির সরকার, এরপরের প্রধানমন্ত্রী হবেন খালেদা জিয়া। এবার এই দানব সরকারের বিদায় দিয়েই আমরা ঘরে ফিরব। এই সরকার বিরোধীদের বাধা দেয়। আর দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময় বাস-ট্রেন ফ্রি করে দেয়, শাড়ি ধরিয়ে দেয়। কিন্তু এরপরও সমর্থক পাচ্ছে না আওয়ামী লীগ।’
যশোর জেলা বিএনপি আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, আজিজুল বারী হেলাল, রকিবুল ইসলাম বকুল, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ ও জয়ন্ত কুমার কুন্ডু।