দুর্গাপূজার ছুটির মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করবে নাকি জনগণের আন্দোলনে বিতাড়িত হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সামনে কয়েকটা দিন সময় আছে, এরমধ্যে পূজার ছুটি। তারমধ্যে সিদ্ধান্ত নিন আপনারা (সরকার) কী করবেন। পদত্যাগ করে সসম্মানে নিরাপদ প্রস্থান করবেন, নাকি জনগণ দ্বারা বিতাড়িত হবেন।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে এ আহ্বান জানান তিনি। সরকারের পদত্যাগের ১ দফা দাবিতে সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি। সমাবেশ থেকে আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, এটা খুব প্রয়োজনীয় কথা, আমরা তাদেরকে (সরকারকে) আবারও আহ্বান জানাই জনগণের ভাষা বুঝতে পেরে পদত্যাগ করুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। শান্তিপূর্ণ জনগণের প্রতিনিধি হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে এই লাখও জনতা সমাবেশ আপনাকে বার্তা দিয়েছে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) আর নেই।
সরকার গত কয়েক মাসে বিএনপির ৯৬ জন নেতাকে বিভিন্ন মামলায় সাজা দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে, আমাদের (বিএনপির) যারা নির্বাচন করতে পারেন, তাদেরকে সাজা দিয়ে নির্বাচনের অযোগ্য করতে পারলে নির্বাচনের মাঠ ফাঁকা হয়ে যাবে। এরা ক্ষমতায় থাকলে শুধু রাজনীতি নয়, দেশ রসাতলে যাবে।
বিএনপির আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তো ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছি না। আমরা জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আজকেও দেখলাম প্রথম আলোর ভুয়া পেজ খুলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সেখানে বলা হয়েছে আজকের বিএনপির সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। আসলে জনগণ যখন জানিয়ে দিচ্ছে যে তাদেরকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না, তখন তারা বিভিন্ন রকমের অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। আজকের এই লাখও জনতার প্রমাণ করে তাদের এই প্রোপাগান্ডা জনগণ বিশ্বাস করে না।
সরকার জনগণের ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, যতই তাদের ক্ষমতা শেষ হওয়ার দিন শেষ হয়ে আসছে ততই তারা এসব অপকৌশল নিচ্ছে।
গতকাল রাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, কিন্তু আমরা খুব বেশি আশ্চর্য হইনি। কারণ যখনি আমাদের বড় সমাবেশ থাকে তখনি এই ধরনের গ্রেপ্তার করে। এখন পর্যন্ত যতটুকু খবর পেয়েছি সমাবেশকে পণ্ড করার জন্য ২৫০ জনেরও বেশি গ্রেপ্তার করেছে। এ থেকে প্রমাণ হয় সরকার অত্যন্ত ভয় পেয়েছে। এদের পায়ে কোনো মাটি নেই। ভয় থেকেই সরকার এগুলো করছে।
ফখরুল বলেন, আমি আবারও বলছি এই সরকার সম্পূর্ণ অবৈধ সরকার। এরা বলছে সংবিধানের বাইরে যাবে না। এরা সংবিধান কাটাছেঁড়া করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দেয়। সংবিধানের কথা বলে সারাদেশকে সহিংস রাজনীতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গতকালও দেখতে গিয়েছিলেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ডাক্তাররা বলেছেন তাকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে বিদেশে সুচিকিৎসার কোনো বিকল্প নেই। তাদের যতটুকু চিকিৎসা দেওয়ার তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই অবৈধ সরকার তাকে ন্যূনতম চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না। এ সরকার কতটা ভয়াবহ, নিষ্ঠুর।
তিনি আরও বলেন, এই সরকারের কোনো ভিত্তি নেই। এখনও বলছি মানে মানে ক্ষমতা ছাড়ুন। আজকে মানুষ জেগে উঠেছে। এই জাগ্রত জনতা ফুঁসে ওঠার আগে জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, গতকাল একটা বিশেষ সমাজের, বিশেষ দলের, বিশেষ বাহিনীর সভা হয়েছে। যারা এই সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছে। সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আপনারা যেমন খবর পান, আমরা আপনাদের খবর পাই। সেখানে কি হয়েছে? বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যাদের নামে গায়েবি মামলা আছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, আর না থাকলে গায়েবি মামলা দিয়ে হলেও গ্রেপ্তার করতে হবে। তাদেরকে নির্বাচনের আগে ছাড়া যাবে না। আমরাও বলতে চাই, এই সব প্রক্রিয়া কোনো কাজে আসবে না। কারণ আজকে শুধু বিএনপি একা নয়, সারাদেশের জনগণ একাত্ম হয়ে গেছে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আলোচনা-সমঝোতার কথা আসছে। বিএনপি অবশ্যই আলোচনা সমঝোতায় বিশ্বাস করে। কিন্তু তার আগে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। তারপরেই বিএনপি আলোচনায় বসতে রাজি। অবৈধভাবে সংবিধান পরিবর্তন করেছে আওয়ামী লীগ। সংবিধানের দোহাই দিয়ে লাভ হবে না। জনগণ রাস্তায় নেমেছে। সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরবে না তারা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক-দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।