দুই লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্প অনুমোদনে সমীক্ষা না থাকায় এর পরিবর্তে কারিগরি কমিটির মতামত যুক্ত করে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার কারিগরি কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে ইসি সচিবালয়। ওই বৈঠকে তাদের সামনে ইভিএম কেনার মতামত সংবলিত একটি প্রতিবেদনের খসড়া দিয়ে তাতে সই করার অনুরোধ জানায় কমিশন। ওই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সই করেন উপস্থিত কারিগরি কমিটির সদস্যরা। ওই প্রতিবেদনটি রোববার পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কারিগরি কমিটির একাধিক সদস্য যুগান্তরকে জানান, কোনো প্রকল্পের ব্যয় ৫০ কোটি টাকার বেশি হলেই সমীক্ষা থাকতে হয়। ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ইভিএম প্রকল্পে কোনো সমীক্ষা নেই। এ কারণে সমীক্ষা বদলে কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। ওই পর্যবেক্ষণের ভিতিত্তে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে তারা বলেন, আজকের (বৃহস্পতিবার) বৈঠকে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়নি। আমাদের সামনে একটি ড্রাফট (প্রতিবেদন) দেওয়া হয়েছে। ওই ড্রাফটে ইভিএম কেনার সফটওয়্যার ঠিক রেখে উন্নতমানের হার্ডওয়্যার যুক্ত করার পক্ষে মতামত রয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আমরা যে ১০-১২ জন কারিগরি কমিটির সদস্য ছিলাম তারা সই করে দিয়েছি। ওই প্রতিবেদনটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। তারা জানান, উপস্থিত কমিটির সদস্যদের কেউ ভিন্নমত পোষণ করেননি। সবাই সই করে দিয়েছেন।
ইসি সূত্র জানায়, এর আগেও ২৩ অক্টোবর কারিগরি কমিটির বৈঠক করেছিল ইসি। ওই বৈঠকে উঠে আসা সুপারিশ পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরিকল্পনা কমিশন নতুন করে পর্যবেক্ষণ দেওয়ায় আবারও কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করল ইসি। কারিগরি কমিটির বৈঠকের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, টেকনিক্যাল কমিটির সবার স্বাক্ষরযুক্ত পর্যবেক্ষণ কমিশনের মাধ্যমে আমরা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়ে দেব। তারপরে পরবর্তী কার্যক্রম হবে। ইভিএম প্রকল্পের বাজেটের কাটছাঁট প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো টেকনিক্যাল কমিটি। এখানে বাজেট কাটছাঁটের বিষয় নেই। টেকনিক্যাল কমিটি কী পরামর্শ দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবই তো এখানে বলা যাবে না। মোটাদাগে যে সুপারিশ দিয়েছে সেগুলো হল আগামী নির্বাচন করতে গেলে বেশকিছু ইভিএম লাগবে। বর্তমানে যে ইভিএম আছে তা দিয়ে নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে দেড়শ আসনের ক্ষেত্রে আমাদের আরও ইভিএম কিনতে হবে।
ফিজিবিলিটি স্টাডির বদলে টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ দিচ্ছি মন্তব্য করে ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল রাকিবুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ইভিএম কেনার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনাটা প্ল্যানিং কমিশন দেখেছে। প্ল্যানিং কমিশন আমাদের কিছু অবজারবেশনের জায়গা দিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল আমরা যে টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন দিয়েছি সেটা টেকনিক্যাল কমিটির রিপোর্ট সাপোর্টেট কি না। সেজন্য কারিগরি কমিটির বৈঠক করলাম। তিনি বলেন, ইভিএমভিত্তিক কিছু পর্যবেক্ষণ পরিকল্পনা কমিশন দিয়েছে। বেতন-ভাতা, পরিবহণ খাতের খরচ, মেইটেইন্যান্স সার্ভিস-এগুলো কতটা যথার্থ সেগুলো দেখতে বলেছে। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করেছি। তাদের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে আমাদের চাহিদা মিলিয়ে দেখছি। ইভিএম প্রকল্পের ব্যয় কমছে কি না-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সুযোগ থাকলে অবশ্যই ব্যয় কমায়ে দেব।