বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অনেকেই বিএনপিকে আন্দোলনের কথা বলেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বিএনপি আন্দোলন করেছে। জনগণ সারা দেশ বন্ধ করে দিয়েছিল। বিএনপি সময় হলে আন্দোলন করবে। এখনো আন্দোলনের ডাক দেওয়ার সময় আসেনি। সময় হলেই আন্দোলনের ডাক আসবে। ছাত্র-যুবকরা মাঠে না নামলে সফলতা কঠিন। ছাত্র-শ্রমিক-যুবক-তরুণদের সংগঠিত করে তাদের নেতৃত্বে রাজপথে গণঅভ্যুত্থান হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, রাজপথে গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরাজিত হবে, অবশ্যই হবে। তা তরুণরাই পারবে। যেকোনো পরিবর্তনে তাদেরকেই সামনে আসতে হবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে যদি আমরা আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি তাহলে অবশ্যই সফল হবো।
আন্দোলনে প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, আমাদের অনেক বয়স হয়ে গেছে। তারপরও তো আমি রাস্তায় এসে দাঁড়াই। যেদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাজকে (ছাত্র নেতা) আমার বুক থেকে যখন ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেদিন ক‘জন আপনারা ঘুরে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বলেন তো? এগুলো আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। সবসময় আশা করি, আমাদেরকে শক্তি যোগাবে তরুণরা।
খালেদা জিয়াকে ‘আন্দোলনের প্রাণশক্তি’ অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি হচ্ছেন সেই ব্যাবিলনের বংশীবাদক যার বাঁশি না বাজলে মানুষ বের হয়ে আসে না। এটা সত্য, আজকে সরকার ম্যাডামকে বন্দি করে রেখেছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তারা কাজগুলো করেছে। তার মুক্তির জন্য সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। তাকে মুক্ত করতে হবে। ৮ হাজার মাইল থেকে যিনি আমাদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের খুব পরিস্কার কথা, এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এই নির্বাচন কমিশন কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। সুতরাং তাদেরকে যেতে হবে। এরপর একটি নিরপেক্ষ সরকার ও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। এই কাজটি আমাদেরকে করতে হবে, অন্য কেউ করে দিয়ে যাবে না। আমেরিকা করে দিয়ে যাবে না, চীন করে দিয়ে যাবে না, ভারত করে দিয়ে যাবে না। বাংলাদেশের মানুষকে এটা করতে হবে এবং এর নেতৃত্ব অবশ্যই বিএনপিকে দিতে হবে।
তথ্য-উপাত্ত নিয়েও নৈরাজ্য উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, পত্রিকায় এসেছে, রোববার সংসদে ওদের একজন সদস্য বলেছেন, বড় চোরদের দুর্নীতিতে মাথা হেট হয়ে যায়। মানে ওরা ছোট চোর। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, এখন তথ্য-উপাত্ত নিয়েও নৈরাজ্য চলছে। আপনি দেখেন না- কোনো পরিসংখ্যানও ঠিক নাই। করোনা টেস্ট, আক্রান্ত ও মৃত্যুর রিপোর্ট একটাও ঠিক না। একটা রিপোর্ট ঠিক আছে- টাকা কত পাচার হচ্ছে সেগুলো ঠিক আছে। বাড়ি হচ্ছে কানাডায়, মালয়েশিয়ায়, বাড়ি হচ্ছে সৌদি আরবে, লন্ডনে। শপিং মল তৈরি হচ্ছে। কেউ আর দেশে টাকা রাখে না। কারণ জানে যে, সময় আসবে যখন মানুষ প্রত্যেকটার হিসাব নেবে।
কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের(সরকার) একটাই লক্ষ্য শুধু দুর্নীতি করবে, চুরি করবে। টেস্টের মধ্যে চুরি, সার্টিফিকেট দেবে সেখানেও চুরি, মাস্ক কিনবে সেখানেও চুরি, পিপি করবে সেখানেও চুরি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রী যিনি উপস্থিত থেকে রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদের সঙ্গে চুক্তি করলেন। সাহেদকে জেলে নিলে তাহলে মন্ত্রীকে নিলেন না কেনো? মন্ত্রীর চাকরিটা গেলো না কেনো? হি ইজ ইকুয়েলি রেন্সপন্সেবল, চুক্তির সময়ে তিনি উপস্থিত ছিলেন।
ড্যাবের সভাপতি হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন-বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, ড্যাবের মহাসচিব আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজুল ইসলাম, শহীদ হাসান, মেহেদী হাসান, জহিরুল ইসলাম শাকিল, কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন প্রমুখ।