‘আমি না থাকলে তাজিন আপা স্ট্রোক করে বাসায় মৃত্যুবরণ করতেন। লাশ পড়ে থাকত বাসায়। আর মিহির ছিল বলেই তো ফ্রেশ হিমুরে বের করে হাসপাতালে নিয়ে আসা গেছে। আমি উপকার করছি এজন্য আমাকে সবাই মিলে ফাঁসি দিয়ে দেন। আমার কেউ নেই তো, কোনো বড় লেভেলের মানুষ নেই যে আমাকে সাপোর্ট দেবে এবং ব্যাকআপ দেবে।’
অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু ও তাজিন আহমেদের মৃত্যুর ইস্যুতে নাম জড়ানোয় এভাবেই আত্মপক্ষ সমর্থন দিয়েছেন মেকআপ আর্টিস্ট মিহির।
‘তাজিনের পাশে ছিলেন, হিমুরও পাশে’ এমন শিরোনামে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর রোববার (৫ নভেম্বর) নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন মিহির। সেখানে মিহির দাবি করেন, আমি না থাকলে হিমুর বয়ফ্রেন্ড তাকে ঘরের ভেতর ঝুলিয়ে রেখে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যেত।
বৃহস্পতিবার হঠাৎ অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। তার মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয় রহস্য। তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা আর আত্মহত্যা নিয়ে মিডিয়াপাড়ায় দোদুল্য অবস্থা তৈরি হয়। এরপর রহস্য উদ্ঘাটন করতে অভিনেত্রীর প্রেমিক জিয়াউদ্দিনকে রুফিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পাশাপাশি র্যাবের নজরদারিতে রয়েছেন মিহিরও।
মেকাপ আর্টিস্ট মিহির বেশ কয়েক বছর ধরে হিমুর বাসায় থাকতেন বলেও জানা যায়। হিমুর দেখাশোনার দায়িত্বেও তিনি ছিলেন। হিমুর মৃত্যুর সময়ও মিহির তার বাসায় উপস্থিত ছিলেন। একই ঘটনা ঘটেছে অভিনেত্রী তাজিন আহমেদের সময়ও। সেসময়ও তার পাশে ছিলেন মিহির। এরপরই মিহির ইস্যুতে তদন্তের দাবি জানান একাধিক শিল্পী ও মিডিয়াকর্মীরা।
এ বিষয়ে উপস্থাপক ও অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় বলেন, হিমুর সব তথ্য, জীবনের-যাপনের কষ্ট, সব কিছু মিহির জানে। মিহিরকে ডিবি বা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আনা উচিত। তাকে জিজ্ঞাসা করলেই জানা যাবে- এটা কি অপমৃত্যু, না অন্য কিছু।
অভিনেত্রী তাহমিনা সুলতানা মৌ বলেন, অতীতের বিভিন্ন ঘটনার ক্ষেত্রে উনার(মিহির) নাম বারবার আসছে। এটা একটু তদন্ত করে দেখা উচিত।
এসব আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই রোববার সকালে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে হুমায়রা হিমু ও তাজিন আহমেদের মৃত্যু নিয়ে কথা বলেন মিহির। ১৫ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের সেই লাইভে আত্মপক্ষ সমর্থন ছাড়াও একাধিক প্রশ্ন রাখেন তিনি।
শুরুতেই মিহির জানান, তিনি প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। এ জন্য তিনি বিষয়টি সবার সঙ্গে শেয়ার করতে লাইভে এসেছেন।
মিহিরের বক্তব্যের বড় অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘ফেসবুকে আমাকে নিয়ে ঝড় তুলছে কিছু মানুষ। আমি হেন, আমি তেন, আমি ড্রাগ ডিলার। তার পর তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন— এর পরও পুলিশ আমাকে রিমান্ডে নেয় না কেন? তিনি বলেন, আপনারা যে এটা লিখেছেন আপনারা কি জানেন আমি এই তিন দিন কোথায় ছিলাম? আমি হিমুকে বাসা থেকে হাসপাতালে নিয়ে গেছি, যখন ডাক্তার ঘোষণা দিয়েছে যে হিমু মৃত। সঙ্গে সঙ্গে হিমুর বয়ফ্রেন্ড দুটি মোবাইল নিয়ে পালিয়ে গেছে। তার পর ওর (হিমুর) খালারা আসছে, আমরা থানায় গেছি, স্টেটমেন্ট দিয়েছি। তখন থেকে আমি কালকে (শনিবার) পর্যন্ত থানায় বসা ছিলাম।’
‘শনিবার সকালে ওসি আমাকে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে পুরান ঢাকা পাঠাইছেন। ওখানে গিয়ে আমি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সাক্ষী দিই। তার পর ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে বলেছেন যে, ঠিক আছে আপনি এখন যেতে পারেন। এসআই সাব্বির ভাই বলল, আপনার আর কোনো কাজ নেই আপনি যেতে পারেন। এই তিন দিন ধরে আমাকে থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে, নজরবন্দিতে রাখা হয়েছে। আমার ফোন টেপ করা হয়েছে। আমাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছে। হাজার হাজার প্রশ্ন করা হয়েছে।’
‘আমাকে পুলিশ আর কি রিমান্ডে নেবে, আমাকে কি নিয়ে ফাঁসি দিয়ে দিবে— এমন প্রশ্ন রেখে মিহির বলেন, আমি কি ক্রাইম করছি। হিমুর বাসায় থাকার কারণ হচ্ছে, আমার কাজ বন্ধ, আমি একটা সিরিয়াল করছি ওইটার পেমেন্ট আজকে ছয় মাস ধরে বিটিভিতে আটকানো, বাসা ভাড়া দিতে পারি না। আমার বাড়িওয়ালি আমার রুম তালা মেরে দিসে। তাই আমি বাধ্য হয়ে হিমুর বাসায় ছিলাম। আর এমনিতেও থাকতাম। রাতে হয়তো আমি আমার বাসায় থাকতাম, পরে আমি হিমুর দেখাশোনা করতে চলে আসতাম। কারণ হিমুর মাকে আমি মা ডাকছি, উনাকে আমি আম্মা বলতাম। হিমুর মা আমাকে বলছে যে, আমি না থাকলে আমার মেয়ের দেখাশোনা করিস।’
‘তাজিন আপা মরছে আমি ছিলাম, হিমু মরছে আমি ছিলাম— এ বিষয়টি আপনাদের ভাবিয়ে তুলছে জানিয়ে মিহির বলেন, এই পাঁচ বছরের ব্যবধানে দুজন মানুষ মরছে আমি ছিলাম। তারা আমার নিকটাত্মীয় ছিল, ফ্যামিলি মেম্বারের মতো। আমি না থাকলে হিমুর বয়ফ্রেন্ড তাকে ঘরের ভেতর ঝুলাইয়া রাইখা দরজা বন্ধ কইরা পালাইয়া যাইত। এটা কি হতো না? এটা তো কেউ বলেন না যে, তুই ছিলি বলে হিমুকে আমরা বের করে আনতে পারছি বা ওকে ধরতে পারছে পুলিশ। হিমুর বয়ফ্রেন্ড ইন্ডিয়ান। না হলে তো ওই ছেলে হিমুকে রেখে কবে পালাইয়া যাইত। ঠাণ্ডা মাথায় পলাইয়া যাইত। আমি ভালো করছি এটা কেউ বলে না। সব খারাপ করছি, আমি রাবন। আমাকে পারলে ফাঁসি নিয়া দেন।’
‘হিমু মরছে আমি ছিলাম। এখন আমি করছি না ওই ছেলে করছে সেটা তো ওই ছেলে নিজেই স্বীকার করছে। তার পরও কেন আপনাদের ভেতর এত দ্বিধাদ্বন্দ্ব যে মিহির ছিল। মিহির ছিল বলেই তো ফ্রেশ হিমুরে বের করে হাসপাতালে নিয়ে আসছে।’
‘আমি উপকার করছি এই জন্য আমাকে সবাই মিলে ফাঁসি দিয়ে দেন। আমার কেউ নেই তো, কোনো বড় লেভেলের মানুষ নেই যে আমাকে সাপোর্ট দিবে, ব্যাকআপ দিবে। আমি মনে করতাম মিডিয়া আমার ফ্যামিলি, আমি কাজ করি, সবাই আমার পরিবার, আমি যখন যেখানে কাজ পাই, তাদের জন্য মন থেকে কাজ করি। এমনকি অতিরিক্ত কাজও করে দিই।’
‘তাদের যে কাজ আমার করার না, এগুলোও আমি করি শুটিংয়ের সেটে। আমি সেটে সবাইকে আপন করার চেষ্টা করি। সবাইকে ভালো করে সার্ভিস দিই। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি এত বছরের সার্ভিসে।’
‘আমার ভুলটা কোথায় একজন বের করেন, একজন গাইড করেন আমাকে। তা না খালি আমাকে নিয়ে বড় বড় কথা আর বদনামি করবেন, করেন। আমি যদি কোনো ধরনের খারাপ কাজ করতাম, তা হলে ভয়ে পালাইয়া যাইতাম। আমার ভেতরে ভয় লাগে না। আমার ভেতরে ঘেন্না লাগছে, ভেতরে কষ্ট হচ্ছে। আপনাদের জন্য মায়া হচ্ছে যে, আপনারা এতটা নেগেটিভ যে আপনারা মানুষকে নিয়ে ভাবতে পারেন না। মানুষের সাহায্য করতে পারেন না।’