স্কুলপড়ুয়া সব ছাত্র-ছাত্রীদের সন্ধ্যার পর প্রয়োজন ব্যতীত বাইরে বের না হয়ে বাড়িতে বসে লেখাপড়া করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। শিক্ষার্থীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখতে ইউপি চেয়ারম্যান ব্যতিক্রমী এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
উঠতি বয়সী স্কুলপড়ুয়া কিশোরেরা সন্ধ্যার পর চায়ের দোকানে, রাস্তার ধারে বসে মোবাইল গেমিং, অনলাইনে জুয়া, চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে না পারে এজন্যই এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ৭নং হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শিকদার ওয়াহিদুজ্জামান (ইকু) তার ফেসবুক পোস্টে এলাকাবাসীর উদ্দেশ্য এমন বার্তা দেন।
এছাড়া তিনি ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সন্ধ্যার পর কোনো শিক্ষার্থী যেন দোকান-পাট, রাস্তার ধারে বসে মোবাইলে গেম খেলা, অনলাইনে জুয়া খেলাসহ কোনো অপরাধমূলক কাজ করতে না পারে এজন্যই মাইকিংও করেছেন। এসব কাজ তদারকির জন্য গ্রাম পুলিশদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চেয়ারম্যান শিকদার ওয়াহিদুজ্জামান (ইকু) তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, এতদ্বারা ০৭ নং হাকিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সব জনসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, অত্র ইউনিয়নের প্রত্যেকটি গ্রামে স্কুলপড়ুয়া যে সব ছাত্রছাত্রী রয়েছে, তারা এখন থেকে সন্ধ্যার পরে বাড়িতে বসে লেখা পড়া করবে। প্রয়োজন ব্যতীত কোনো স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রী সন্ধ্যার পরে রাস্তাঘাটে, হাট-বাজারে, অলিতে গলিতে অবস্থিত চায়ের দোকানে থাকতে পারবে না। এমনকি সন্ধ্যার পর কোনো স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রী রাস্তাঘাটে, হাট-বাজারে, অলিতে গলিতে অবস্থিত চায়ের দোকানে বসে মোবাইলে গেম খেলা, এক সঙ্গে বসে আড্ডা দেওয়া, ফেসবুক চালানো, ইমো-মেসেঞ্জারে চ্যাটিং করা, অনলাইনে জুয়া খেলা ইত্যাদি কাজ হতে বিরত থাকবে। কোনো ছাত্র-ছাত্রী যদি এখন থেকে সন্ধ্যার পর প্রয়োজন ব্যতীত রাস্তাঘাট, হাট-বাজারে, অলিতে গলিতে অবস্থিত চায়ের দোকানে বসে মোবাইলে গেম খেলা, একসাথে বসে আড্ডা দেওয়া, ফেসবুক চালানো, ইমো-মেসেঞ্জারে চ্যাটিং করা, অনলাইনে জুয়া খেলা ইত্যাদি কাজে জড়িত থাকে তাহলে প্রত্যেক গ্রামে নিয়োজিত গ্রাম পুলিশগণ তাহাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া সহ তাহাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে এবং পরবর্তীতে থানায় কর্মরত পুলিশগণ তাহাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এমনকি তাহাদের অভিভাবকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান শিকদার ওয়াহিদুজ্জামান (ইকু) বলেন, বেশ কিছুদিন আগে গ্রামের একজন ভ্যানচালক বাবা পরিষদে অভিযোগ করেন, তার ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ি থেকে নগদ ৯ হাজার টাকা এবং তার স্ত্রীর একটি স্বর্ণের চেইন চুরি করে নিয়ে গেছে। পরে আমরা সেই ছেলে এবং তার বন্ধুদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দিখি চুরি করা টাকা ও স্বর্ণালংকার বিক্রয় করে সেই টাকা দিয়ে বন্ধুরা মিলে অনলাইনে জুয়া খেলেছে।
তিনি আরো বলেন, সন্ধ্যার পর যখন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়ায় তখন চায়ের দোকানে, রাস্তার মোড়ে বসে ১০/১২ জনের দল মোবাইলে গেম খেলে, টিকটক করে, বিভিন্ন ধরনের নেশা করে। তাদের পাশ দিয়ে গেলেও তারা কিছুই মনে করে না। একদিকে তাদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে সমাজে কিশোর অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। যার কারণে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
শৈলকুপা উপজেলা নিবার্হী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, জনপ্রনিধি হিসেবে চেয়ারম্যান ভালো একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উঠতি বয়সী কিশোর-তরুণীদের চালনা করা খুবই সহজ, তাদের মনটা নরম থাকে। চাইলে সহজে তাদের বোঝানো যায়। চেয়ারম্যান সাহেব এই উদ্যোগের মাধ্যমে পড়ালেখার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোনিবেশ করাতে চেয়েছেন। এ বিষয়টি আমি মনে করি যথেষ্ট ভালো একটি উদ্যোগ। এর মাধ্যমে কিশোর গ্যাং, উঠতি বয়সী তরুণীদের যে সব অপরাধ হয় সেগুলো অনেক কমে আসবে।