সমস্যা সমাধানে প্রজ্ঞা ও কৌশল প্রয়োগের জন্য সচিবদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, প্রশাসনের সমস্যাগুলো এক দিনেই সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিনের জমানো এসব সমস্যা আপনাদেরই সমাধান করতে হবে।
নিজেদের প্রজ্ঞা ও কৌশল প্রয়োগ করে প্রশাসন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমস্যার সমাধান করতে হবে। তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। গতকাল সোমবার বেলা সোয়া ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় ২৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন ড. ইউনূস।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা এ সময় সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে সচিবদের প্রতি বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সচিবদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যেকোনো বিষয়ে বিস্তারিত নথি না পাঠিয়ে সারসংক্ষেপ পাঠাবেন।
আইন ও নীতিমালা-সংক্রান্ত কোনো ফাইল পাঠাবেন না। যেসব আইন মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছে, তা ফেরত নেবেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনায় জনগুরুত্বকে অগ্রাধিকার দেবেন। অর্থের অপচয় রোধ করতে হবে। কোনোভাবেই জনগণকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। সার, বিদ্যুৎ, কৃষি, জ্বালানি, বন্দর, রেল, খাদ্যসহ জরুরি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে সাত দিনের মধ্যে তালিকা করে আমাকে জানাবেন।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মন্ত্রণালয়গুলোকে গতিশীল কাজ দ্রুত চালু করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ জন্য সাত দিন সময় দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সচিব আরও বলেন, গত কয়েক বছরে যাঁরা পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁদের দাবিগুলোর বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত হবে। মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরগুলোকে দ্রুত ফাংশনাল করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
পিএসসি থেকে যাঁরা ২৮ থেকে ৪২ বিসিএসের সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, তাঁদের বিষয়গুলো আমি উপস্থাপন করেছি। আশা করি, কাল-পরশু মধ্যে একটা ধারণা দিতে পারব। কী কী কারণে পদোন্নতি হয়নি, সে বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করব। যেসব মন্ত্রণালয়ে আগে মন্ত্রী ছিলেন, সেসব মন্ত্রণালয়ের কাজ যাতে স্থবির হয়ে না যায়, সচিবেরা সেসব কাজ নিজ উদ্যোগে যাতে শুরু করেন, সে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকের সামগ্রিক চিত্র নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সচিব জানান, বৈঠকে সাবলীল ভঙ্গিতে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।তিনি প্রশাসনকে দ্রুত গতিশীল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণ যাতে সেবাবঞ্চিত না হন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।
মন্ত্রণালয়গুলোকে ‘ভাইব্রেন্ট’ করুন। এ সময় খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেন বলেন, কিছু কিছু জায়গায় তাঁর বিভাগের কর্মকর্তারা দপ্তরে বসতে পারছেন না। আর বিমানসচিব মোকাম্মেল হোসেন জানান, আন্দোলনের কারণে বিমানের এমডি দপ্তরে বসতে পারছেন না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, বিগত দিনের বঞ্চিতরা পদোন্নতির জন্য চাপ দিচ্ছেন। এ সময় তাঁকে থামিয়ে দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এভাবে শুনতে গেলে অনেক সময় লাগবে। আপনারা যাঁর যাঁর মন্ত্রণালয়ের সমস্যা নিজস্ব প্রজ্ঞা ও কৌশল দিয়ে মিটিয়ে ফেলুন। এ বিষয়গুলো আপনারাই ভালো জানেন।
তোপের মুখে সায়লা ফারজানা
গতকাল সারা দিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছিল উত্তপ্ত। পদোন্নতিবঞ্চিতরা দফায় দফায় মহড়া দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের বিভিন্ন কক্ষে ও বারান্দায়। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের তোপের মুখে দপ্তর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা। তিনি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলামের স্ত্রী ও বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের মহাসচিব। শেখ হাসিনা প্রশাসনের প্রভাবশালী এই কর্মকর্তাকে বঞ্চিতরা আটকে রাখলে অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশি পাহারায় গাড়িতে তুলে দেন। এ সময় বঞ্চিতরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আরও দুই অতিরিক্ত সচিবকে শেখ হাসিনার দালাল বলে তিরস্কার করেন।