অন্তর্বর্তী সরকার একটি সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, যেখানে রাষ্ট্রব্যবস্থা, প্রশাসন, অর্থনীতি এবং পররাষ্ট্রনীতি সব ক্ষেত্রেই সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। জনগণের কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনে প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে একদিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন অপরদিকে একটি কার্যকর সংস্কার প্রক্রিয়া জরুরি। সদ্যবিদায়ী বছরের বিপ্লবের পরে ছাত্র-জনতা সংস্কারের দাবি জানিয়েছিল, আর এখন নির্বাচনের দাবি সামনে এসেছে নানা কারণে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রশাসনের মধ্যে অস্থিরতা, একের পর এক ষড়যন্ত্র, এবং অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া শক্তির অপপ্রচার মোকাবিলার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাও তেমন কার্যকর হয়নি। সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকা মানুষের মধ্যে কিছুটা হতাশা দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসনিক শক্তি এবং বিভিন্ন খাতে বিদ্যমান অনিয়ম দূর করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো দৃশ্যমান সফলতা দেখা যায়নি।
এদিকে, সরকার গঠনের পর কিছু উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে, যা সরকারের মধ্যে কিছুটা অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। বিশেষত বিপ্লবের পর যে ব্যাপক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, তা এখন ম্রিয়মান হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি চলতে থাকলে সরকারের সঙ্গে সাধারণ জনগণের এবং ছাত্র-জনতার মধ্যে বৈপরীত্য সৃষ্টি হতে পারে।
বিএনপির পক্ষ থেকে নতুন বছরের শুরুতে তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনের দাবি আরও জোরালোভাবে তুলবে। বিএনপির নেতারা আশা করছেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাবে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, নতুন বছর আমাদের মূল প্রত্যাশা হচ্ছে একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। তারা বিশ্বাস করেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাবে।
এছাড়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলটি নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করতে চায়। তারেক রহমানের নির্দেশনায় দলীয় কর্মকাণ্ড আরও বেগবান হবে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতিও সেরে ফেলতে চায় দলটি।
তবে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সারাদেশে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি চালাচ্ছে এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ জানিয়েছেন, ২০২৪ সাল স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তির বছর ছিল এবং ২০২৫ হবে ফ্যাসিবাদ মুক্তির বছর।
এছাড়া, যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোও নতুন বছরে রাজপথে থাকবে এবং রাজনৈতিক ঐক্য গঠনের জন্য কাজ করবে। ইসলামী দলগুলোও নির্বাচনী জোট গঠনের চেষ্টা করছে, যদিও এই প্রক্রিয়া এখনও চলমান রয়েছে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এই দলটি সামনে আসলে রাজনীতির মাঠে নতুন উত্তেজনা তৈরি হতে পারে, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই দলটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হয়, তবে এটি রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।