প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা কিন্তু একটা সংকটে আছি, কোনো সন্দেহ নেই। কেননা এখনও রাজনৈতিক পুরোপুরি ঐক্যবদ্ধ দেখতে পাচ্ছি না।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে ‘জাতীয় ভোটার দিবস-২০২৩’ এর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবসহ সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারিরা উপস্থিত ছিলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা কিন্তু একটা সংকটে আছি, কোনো সন্দেহ নেই। কারণ ভোট নিয়ে আমরা এখনও রাজনৈতিক পুরোপুরি ঐক্যবদ্ধ দেখতে পাচ্ছি না। এই ঐক্যবদ্ধটা খুব বেশি প্রয়োজন। যদি ঐক্যবদ্ধের ভিত্তিতে নির্বাচনটা অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে রাজনৈতিক সংকট উদ্বুদ্ধ হওয়ার সম্ভবনাটা তিরোহিত হয়ে যায়। আমরা কখনই চায় না, নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের সময়ে কোনো রাজনৈতিক সংকট উদ্ভূত হোক। যেমন, ১৯৭০ সালের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংকট উদ্বুদ্ধ হওয়ার কারণে দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছিলাম। কিন্তু সেটাও একটা সংকট ছিল। ’
বৃটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে নির্বাচনের নানা, চড়াই-উতরাই, দেশভাগ, পাকিস্তান ভাগ ইত্যাদির সঙ্গে নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেন সিইসি।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়নি। তারপর ৭ মার্চ এসেছে। নির্বাচনের গুরুত্বটা এ কারণেই বলছি যে, একটা নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখান করার কারণে একটা দেশ ভেঙে গিয়েছিল। একটা জাতি যখন দেখল তাদেরকে অপমান করা হয়েছে। তাদেরকে অস্বীকার করা হয়েছে, জনগণের আহরিত ম্যান্ডেটকে মূল্যায়ন করা হয়নি, তখন একটা যুদ্ধ হয়েছে। কাজেই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিকভাবে এটা সবাই, আমাদেরকেও অনুধাবন করতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এটা অনুধাবণ করা প্রয়োজন।
সাবেক এই জেলা জজ আরো বলেন, বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচন কমিশন ১৯৭২ সালে ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর হয়। সে সময় বিচারপতি ইদ্রিস সিইসি হয়েছিলেন। তার কমিশনের অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। সেটাই কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচন। এরপর উল্ট-পাল্ট হয়ে যায় আর ভালোভাবে নির্বাচনটা এগোতে পারেনি। ১৯৭৫ সালের পর সংবিধান অকার্যকর ছিল। এরপর বিভিন্ন নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনগুলো খুব যে আস্থাভাজন হয়েছিল তা না।
সিইসি বলেন, আমরা আবার নির্বাচনী ব্যবস্থায় ফিরে এসেছি, সামরিক শাসন আমল শেষ হয়ে গেলে। ১৯৯০ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন হয়েছে। শুধুমাত্র ২০০৭ সালে এক এগারো সরকারকে অসাংবিধানিকভাবে অবস্থান করতে হয়েছিল। এরপর আবার নির্বাচনটা চালু হয়েছে এবং ধারাবাহিকভাবে চালু আছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থাটা খুব আস্থাভাজন হয়ে ওঠেনি। আজকে পেপার পড়ছিলাম, একজন বড় মাপের নেতাই বলছেন, জাতীয় পার্টির জিএম কাদের সাহেব, উনার বক্তব্য হচ্ছে- নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। কিছুটা সত্য যদি থেকেও থাকে এটা ভালো কথা নয়। মানুষের আস্থাটা অর্ঝন করতে হবে। মানুষের আস্থা আনার জন্য আমাদের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব রয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন যেহেতু নির্বাচন আয়োজন করবে ভোটার শিক্ষণ কার্যক্রম খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আজকে আমরা ভোটার তালিকা দিয়েছি। প্রায় ১২ কোটি মানুষ ভোটার হয়েছে। ১২ কোটি মানুষ হয়তো ভোট দেবে না। কিন্তু ভোটার অ্যাডুকেশন বাড়িয়ে যদি দেখাতে পারি সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ভালো হয়েছে, একটা কথা হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে এমনিতেই ভোটার উপস্থিতি ভালো হয়, তার সঙ্গে যদি আমাদের ভোটার অ্যাডুকেশন বাড়াতে পারি।
তিনি আরো বলেন, আমরা যেটা স্লোগানে বলেছি, ভোটার হবো আইন মেনে, ভোট দেবো যোগ্যজনে। যোগ্যজনে কথাটার মধ্যে কিন্তু একটা মনস্তাত্তিক বিচক্ষণার প্রশ্ন আছে। যিনি ভোট দেবেন তার দায়িত্ব কিন্তু শুধু ভোট দেওয়া না, তার দায়িত্ব কিন্তু নিতে হবে মনস্তাত্তিকভাবে যে, কাকে ভোট দেবেন এটাও তাকে ভেবে দেখা উচিত। এটাও কিন্তু আসবে রাজনৈতিক জ্ঞান থেকে। ভোটারকে যদি আমরা সে বিষয়ে অ্যাডুকেটেড করতে পারি, তাহলে কিন্তু যোগ্যজনে ভোটের অর্থ কি তারাও বুঝতে পারবেন। আমরা যখন বিভিন্ন প্রোগ্রাম নেবো তখন বিষয়টা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
ভোটার দিবস প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, আমরা একটা খাবার তৈরি করে নিজেরাই খেয়ে ফেলবো না। আমি আমাদের সহকর্মীদের বলবো, ভোটার দিবসে আমরা যদি আরও অনেক বিশিষ্টজন ও অংশীজনদের আমন্ত্রণ জানাতে পারি বা তাদের সমবেত করতে পারি তাহলে তারও একটা ইতিবাচক ফল হতে পারে। আগামীতে এই জিনিসটা নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন।