রোববার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, শ্রমিক অধিকার নিয়ে তারা (মার্কিন কর্মকর্তারা) নিজেদের বক্তব্য দিয়েছেন। আপনারা হয়তো খেয়াল রাখবেন, গত বছর থেকেই এই (শ্রম আইন নিয়ে) আলোচনা হচ্ছে। আইনটিতে কী অগ্রগতি হয়েছে, আরও অগ্রগতি সম্ভব কি না; বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করি।
মন্ত্রী বলেন, ‘একটা পদক্ষেপ হিসেবেই আজকের আলোচনা হয়েছে। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, আপনারা জানেন, রাষ্ট্রপতির কাছে যখন শ্রম আইনটি গিয়েছিল, তখন একটি বিশেষ কারণে সেটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কারণটা আগেও আমি ব্যাখ্যা করেছি, আজকের আলোচনায় সেটিও উঠে এসেছে।’
আনিসুল হক জানান, মার্কিন কর্মকর্তারা তাদের থ্রেসহোল্ড সম্পর্কে এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে তারা আমাকে বলেছেন যে এই ব্যাপারে (শ্রম আইন) যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে অংশীদার হিসেবে কাজ করতে চায়। আর যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকের অধিকার নিয়ে তারা খুবই সচেতন এবং এটা তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যু। তখন আমি তাদের বলেছি, এটা বাংলাদেশ সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
“এটা এতোই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, এবার শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজের হাতে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। সে রকম গুরুত্ব এটিকে দেওয়া হয়। আমি এটাও বলেছি যে, আগামী বুধবার শ্রম মন্ত্রণালয়ের একটি টিমের সঙ্গে আলোচনায় বসবো” —যোগ করেন মন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী মার্চে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডি বৈঠকে বসবে। আমাদের অগ্রগতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়ার জন্য এবং তাদের দুয়েকটা জানার বিষয় আছে, সেই বৈঠকের পরে আমরা জানাব। আজ এ পর্যন্তই আলোচনা হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো আপত্তি তোলেনি।
আজকের বৈঠকে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি বলেও জানান আইনমন্ত্রী। তবে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়গুলো কী ছিল, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, থ্রেসহোল্ড নিয়ে তাদের বক্তব্য ছিল। এটা সবসময়ই ছিল। আমি বলেছি, থ্রেসহোল্ড আমরা ১৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। সেখানে বলা আছে, যে কারখানায় তিন হাজার বা তার বেশি শ্রমিক আছে। কথা হচ্ছে, সেটার বিষয়ে একটা আলোচনা হতে পারে।
তারা এটাও বলেছেন, তিন হাজার বা তিন হাজারের বেশি শ্রমিক আছে, এমন কারখানা অনেক কম। এটা আগেও আমি শুনেছি। সেই বিষয়ে যখন প্রশ্ন এসেছে, স্টেকহোল্ডারদের (অংশীজন) সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।
তারা কত শতাংশ চাচ্ছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত এটা ১০ শতাংশ। আমি পরিষ্কার করে দিয়েছি, আমাদের এমপ্লয়ার্স এবং ওয়ার্কাস ফেডারেশনগুলো সবসময় বলে আসছে, আস্তে আস্তে কমানোটাই তাদের জন্য ভালো হবে। বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকারের পরিবেশ অনুসারে এটা কমানো হবে। সেটিই আমাদের সিদ্ধান্ত। যে কারণে আমরা আস্তে আস্তে কমানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি।
উল্লেখ্য, একাদশ সংসদের শেষ অধিবেশনে তড়িঘড়ি করে শ্রম আইনের সংশোধনী বিলটি পাস করা হয়। গত ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল জাতীয় সংসদে তোলা হয়। বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তিন দিন সময় দিয়ে তা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। গত ২ নভেম্বর বিলটি সংসদে পাস হয়। বিলে সম্মতির জন্য গত ৮ নভেম্বর তা রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয়।
বিলটিতে সই না করে গত ২০ নভেম্বর তা সংসদে ফেরত পাঠান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ২২ নভেম্বর সংসদ সচিবালয় এ–সংক্রান্ত বার্তাসহ একটি বুলেটিন প্রকাশ করে। তাতে রাষ্ট্রপতির বার্তা তুলে ধরা হয়। ওই বার্তায় বলা হয়, ‘এই বিলের দফা-৪৫ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে বলে প্রতীয়মান হয়। কাজেই উক্ত দফা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৮০(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে ফেরত পাঠানো হলো।’