নিজেদের মধ্যে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে জাতীয় শ্রমিক লীগের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। মিলেমিশে থাকতে না পারলে কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে বলেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। গত দুই দিন ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ডেকে নিয়ে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠক দুটিতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. নূর কুতুব আলম মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক কে এম আযম খসরু উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় নেতারা শ্রমিক লীগের শীর্ষ দুই নেতাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে না পারলে কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। বৈঠক সূত্র ইত্তেফাককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বৈঠকে জাতীয় শ্রমিক লীগের বিরাজমান সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। জানা গেছে, শীর্ষনেতাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধে বিপর্যস্ত জাতীয় শ্রমিক লীগ। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান এবং সাধারণ সম্পাদক কে এম আযম খসরু গত এক বছর ধরে বসেন না এক মঞ্চে। একসঙ্গে কোনো অনুষ্ঠানও করেন না তারা। এতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। দলের গুরুত্বপূর্ণ এই ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের এমন বেহালে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ইতিমধ্যে একাধিকবার সতর্কও করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবুও কমেনি দূরত্ব। চাঁদাবাজির টাকার ভাগাভাগি ও বিভিন্ন শাখা কমিটি গঠনে বাণিজ্য নিয়ে তাদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব এখন চরমে বলে অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে কর্তৃত্ব দ্বন্দ্বে জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান এবং সাধারণ সম্পাদক কে এম আযম খসরু ইতিমধ্যে পরস্পরকে বহিস্কার করেন। যদিও পরে সাধারণ সম্পাদককে বহিস্কারের কথা অস্বীকার করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। চলমান এই সংকট নিরসনের লক্ষ্যে গত রবিবার শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে তলব করা হয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শ্রমিক লীগের শীর্ষ দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরেন। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে জাতীয় শ্রমিক লীগের শীর্ষ দুই নেতা মিলেমিশে কাজ করার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন।
শ্রমিক লীগের জাতীয় সম্মেলনের প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও শুরুই করতে পারেনি তৃণমূল সম্মেলনের কাজ। সাংগঠনিক ইউনিট কমিটিগুলোও প্রায় সবই মেয়াদোত্তীর্ণ। কোথাও রয়েছে একাধিক কমিটি। ১৯৬৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শ্রমিক লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলনে ফজলুল হক মন্টুকে সভাপতি, আ জ ম খসরুকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রায় ১১ মাস পরে ২০২০ সালের অক্টোবরে ঘোষণা করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ওই বছরের ২০ নভেম্বর সভাপতি মন্টু মারা যান। পরে সহসভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।