সময়টা বেশী দূরের নয়- গেল বছরের ১৫ই আগস্ট। ফেনী শহরের মাস্টার পাড়ায় জয়নাল হাজারী তার বাস ভবনে এসেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করতে। কিন্তু তিনি তা করতে পারেননি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বাধার সম্মুখীন হয়ে পণ্ড হয়ে যায় সেই কর্মসূচী। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য জয়নাল হাজারীর ফেনীর বাড়িতে সেদিন গুলিবর্ষণ, হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। গভীর রাতে ও পরদিন বিকালে দুই দফায় এ হামলা হয় বলে অভিযোগ করেন জয়নাল হাজারী।
তিনি সেদিন বলেছিলেন, পুলিশের বাধার মুখে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের প্রতিরোধে ১৫ আগস্টের শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, তার বাড়িতে অবস্থিত মুজিব উদ্যানে ১৫ আগস্ট জাতির পিতার মৃত্যুবার্ষিকী ও শোক দিবস পালনের জন্য প্রস্তুত চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করে, ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে এবং ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
জয়নাল হাজারী সেদিন বলেছিলে, তিনি অসুস্থ মানুষ। দুই রাত তিনি মাইকের অত্যাচারে ঘুমাতে পারছেন না। প্রতিদ্বন্দ্বীরা তার ঘরের দিকে মাইক ঘুরিয়ে দিন রাত এক টানা মাইক বাজিয়ে চলছে। এমনকি তিনি কারও সঙ্গে কথা বলতে পর্যন্ত পারছেন না। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। মুজিব উদ্যান ও তার বাড়িতে কারো পক্ষে প্রবেশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ঘটনায় জয়নাল হাজারী সেদিন বিকেলে ফেনীতে কর্মরত সাংবাদিকদের ডেকেছিলেন খুলে বলেছিলেন তার যত অভিযোগ। বলেছিলেন এবার এসেছিলাম পোগ্রাম করতে পারিনি। আগামী বার নিশ্চয়ই আসব এবং জাতির জনকের শোক দিবস পালন করব মুক্তিযোদ্ধা এবং দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে।
সেই জয়নাল হাজারী শৈল কুঠিরে ঠিকই ফিরছেন, তবে দেহে প্রাণ নেই, লাশ হয়ে। এবার আর তিনি কোন বক্তৃতা করতে পারবেন না। মুক্তিযোদ্ধারা তার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না, কথা বলতে পারবেন না। কথিত আছে জয়নাল হাজারী যখন ফেনীর সাংসদ ছিলেন, তখন এই বাড়িটি ছিলো তার টর্চারসেল। এখানের একটি কক্ষে ঢুকিয়ে মানুষকে করা হতো নির্যাতন। নানা ঘটনা-অঘটনের সাক্ষী এই শৈল কুঠির।
প্রায় ২০ বছর পর প্রাণ ফিরে পেলো জয়নাল হাজারীর শৈল কুঠির। ২০০১ সালে ১৬ আগস্ট যৌথ বাহিনীর অভিযানে দেশান্তরি হবার পর বেশ কয়েকবার নিজের বাসভবনে ফেরার চেষ্টা করলেও স্বদলীয়দের প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হন। কখনো কখনো আসলেও বেশীদিন থাকতে পারতেন না। এবার তিনি আসছেন কাফনে মুড়িয়ে। চলছে বরণের প্রস্তুতি।