চলতি অর্থবছরের শেষ মুহূর্তে এসে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় সংশোধনের হিড়িক পড়েছে। এক্ষেত্রে তিন মন্ত্রণালয়ের ৭২টি প্রকল্পে যোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি প্রকল্পের বরাদ্দ কাটছাঁট করে কমানো হয়েছে। বাড়তি অর্থ দেওয়া হয়েছে ২৫টি প্রকল্পের অনুকূলে। এগুলো থেকে বাদ দেওয়া অর্থের পরিমাণ ১০২১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। গত ২২ জুন প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। তবে শর্ত দিয়ে বলা হয়েছে, প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ করা অর্থ অনুমোদিত অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী রোববার যুগান্তরকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে সাধারণত প্রশ্ন করি না। কারণ হলো আইনগতভাবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে এই স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। শেষ সময় এসে তারা নিজেদের ধীরগতির প্রকল্পের টাকা কেটে বেশি গতিসম্পন্ন প্রকল্পে দিতে পারে।
সূত্র জানায়, ব্যয় করতে না পারা, অতিরিক্ত বরাদ্দ নেওয়া এবং বাস্তবায়নের ধীরগতিসহ নানা কারণে ৪৮টি প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কেটে অন্যত্র দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ১৯টি প্রকল্পের মধ্যে বরাদ্দ কমছে ১৭টির। এগুলো থেকে ৬৩১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা কেটে দেওয়া হচ্ছে দুটি প্রকল্পের অনুকূলে। এ দুটির অগ্রগতি ভালো বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৩৩টি প্রকল্পের মধ্যে ২০টি থেকে কাটা হচ্ছে ২০২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এই অর্থ নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৩টির অনুকূলে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ২০টির মধ্যে ১০টি থেকে কাটা হচ্ছে ১৮৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১০টি প্রকল্পের অনুকূলে।
এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সবুর যুগান্তরকে বলেন, নানা কারণে অর্থবছরের শেষ সময় এসে দেখা যায় কিছু প্রকল্পে নির্ধারিত বরাদ্দ খরচ করা যাচ্ছে না। তখন সেগুলো থেকে অর্থ কেটে যেখানে প্রয়োজন সেখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এটার আইনগত ভিত্তি রয়েছে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই এটা করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বরাদ্দ কমানোর অনেক কারণই তো থাকে। এর মধ্যে ঠিকাদাররা সময়মতো কাজ করে না, ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা থাকে আবার দরপত্র প্রক্রিয়াতেও অনেক সময় দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়। এমন কারণে অনেক সময় বরাদ্দের পুরোটই ব্যয় করা যায় না।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প থেকে কমছে ১৬৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনের ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পে কমছে ২২০ কোটি টাকা। কাটছাঁট হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ভায়া কুমিল্লা/লাকসাম দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং বিশদ ডিজাইন প্রকল্প। বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ১০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন (দ্বিতীয় পর্যায়)। ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ। রেলওয়ের ২১টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ নবরূপায়ণ। আখাউড়া-আগড়তলা ডুয়েলেগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ এবং আখাউড়া-লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প। এদিকে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১০২ কোটি ১৮ লাখ টাক।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমানো প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-আজিমপুর সরকারি কলোনির ভেতর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণকাজ থেকে কমছে ৩১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এছাড়া নাটোর রোড রুয়েট থেকে রাজশাহী বাইপাস রোড পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে বাদ যাচ্ছে ৪৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের বহিঃসীমানা দিয়ে লুপ রোড নির্মাণসহ ঢাকা ট্রাংক রোড থেকে বায়োজিদ বোস্তামী রোড পর্যন্ত সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প থেকে কমছে ৩০ কোটি টাকা। এছাড়া উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-নোয়াখালী সদরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ। ঢাকার তেজগাঁওয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ। ঢাকাস্থ মিরপুর ৬নং সেকশনে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ এবং মাদানী থেকে বালু নদী পর্যন্ত প্রশস্তকরণ এবং বালু নদী থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প।