বিদায়ের আগ মুহূর্তে এসে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সিদ্ধান্ত মানতে চাচ্ছেন না তারা। আগামীতে কারা ইসিতে আসছেন—সেটি নিয়েই যত ব্যস্ততা তাদের। জানা গেছে, ভোট পুনঃগণনার বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), একাধিক নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব বারবার তাগাদা দিলেও তা কর্ণপাত করছেন না সংশ্লিষ্টরা। ঢাকার কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভোট পুনঃগণনার সিদ্ধান্ত মাঠ প্রশাসনে বাস্তবায়ন করাকে কেন্দ্র করে এই অসহাত্বের চিত্র পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ কমিশন কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা ভাবছে। ঐ ইউপির নির্বাচন থেকে শুরু করে ভোট গণনা, ফলাফল স্থগিত করা নিয়ে পদে পদে অনিয়ম পেয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব মে. হুমায়ুন কবির খোন্দকার বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে ভোট পুনঃগণনা সম্পন্ন করে কমিশনকে জানানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভোটে অনিয়মে কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক নির্বাচন কমিশন ভোট পুনঃগণনার নির্দেশ দিলেও স্বয়ং ইসির দুই জন যুগ্মসচিব (একজন সদ্য পদত্যাগকারী) ও নির্বাচন কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ইউপির রিটার্নিং অফিসার একটি পক্ষের হয়ে ভোট পুনঃগণনায় বাধা সৃষ্টি করছে। ইসির দুই প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয় নির্বাচন কমিশনকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছে। বিদায়ের আগে এই ধরনের ঘটনায় অবাক ইসি সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ নভেম্বর কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউপির ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ঐ ভোটে হযরতপুর ইউপির সদ্য বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ সভাপতি মে. আলাউদ্দিন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ১৫০ ভোটে বিজয়ী হন। অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী মে. আনোয়ার হোসেন আয়নাল আলাদা রেজাল্টশিট নিয়ে দাবি করেন তিনি ৪৬ ভোটে জয়ী। এই পরিস্থিতিতে ঐ ইউপির রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা পল্লি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ তাইবুর রহমান তিনটি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠান। কমিশন ঘটনা তদন্তে ঢাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে দুই প্রার্থী আদালতের দ্বারস্থ হলে নানা আদেশের পর ভোট পুনঃগণনার স্থগিতাদেশ চেম্বার জজ ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে দেয়। ফলে হযরতপুর ইউপির ফলাফল পুনঃগণনার আইনি বাধা কেটে যায়। কিন্তু ভোট পুনঃগণনার পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে গড়িমসি শুরু করেন ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-১ ও ২ শাখার দুই প্রভাবশালী কর্মকর্তা।
হযরতপুর ইউপির ভোট পুনঃগণনার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা-২ এর যুগ্মসচিব ফরহাদ আহম্মদ খান ইত্তেফাককে জানান, আদালতের আদেশ থাকার কারণে ভোট পুনঃগণনা বন্ধ আছে। আপিল বিভাগে এটি নিষ্পত্তি হবে। তবে ইসির আইন শাখার যুগ্মসচিব (জেলা জজ) মে. মাহবুবার রহমান সরকার ইত্তেফাককে বলেন, হযরতপুর ইউপির ভোট পুনঃগণনা বন্ধে আদালতের লিখিত আদেশ পাইনি। ফলে ভোট পুনঃগণনায় আইনি কোনো বাধা নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম বলেন, আইনানুযায়ী ভোট পুনঃগণনায় বাধা নেই। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।