প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এ দলের হাত ধরেই স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের সৃষ্টি। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতার মসনদেও দলটি। এ দেশের সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাও আওয়ামী লীগের হাত ধরে। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটির চোখ এখন আগামী জাতীয় নির্বাচনে। তার ঠিক এক বছর আগে ২২তম জাতীয় সম্মেলন করতে যাচ্ছে দলটি। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতাসীন দলটির নেতৃত্ব নিয়ে কৌতূহল সবার মধ্যে। কারা আসছেন দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে?
তবে ১৯৮১ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ নিয়ে কৌতূহল নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ‘অবিকল্প’ মনে করেন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। ফলে সম্মেলনে নজর থাকে শুধুই সাধারণ সম্পাদক পদের দিকে। তবে এবার সেটিও নেই। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ পদে যে ‘হ্যাটট্রিক’ করতে যাচ্ছেন, তা মোটামুটি নিশ্চিত সংশ্লিষ্টরা। ফলে এবার আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সবার দৃষ্টি ‘প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক’ পদে। যদিও নেতৃত্ব চূড়ান্ত হবে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ-পর্যায়ের নেতারা বলছেন, চ্যালেঞ্জিং সময়ের এ সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিতে তেমন কোনো বড় পরিবর্তন আসবে না। কিছু পদোন্নতি, দায়িত্বে রদবদল ও খুব অল্পসংখ্যক নেতাকে বাদ এবং নতুন কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
আগের ২১ বারের সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ছয়জন নতুন সভাপতি ও ৯ সাধারণ সম্পাদক পেয়েছে। এবারও সেই সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেই ধারণা দলের নেতাদের। সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা দশম বারের মতো এবং ওবায়দুল কাদের টানা তৃতীয় মেয়াদ অর্থাৎ হ্যাটট্রিক করতে যাচ্ছেন।
সম্মেলন ও নেতৃত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সবার বক্তব্যই বেশ স্পষ্ট। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হচ্ছে নিয়মিত জাতীয় সম্মেলন হওয়া। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে নেতা নির্বাচিত হয়। সভাপতি পদে শেখ হাসিনাকে সবসময় কাউন্সিলররা সমর্থন করে থাকেন। তার বিকল্প নেই। একইসঙ্গে তাকেই নেতৃত্ব বাছাইয়ের সর্বময় ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু-কন্যা দলের প্রতিটি পদে উপযুক্ত নেতৃত্ব মনোনীত করেন। এবারও তার ব্যত্যয় হবে না।
দলটির নেতৃত্ব নির্বাচনের রেওয়াজ অনুযায়ী, সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রথমে সভাপতির নাম প্রস্তাব করেন একজন নেতা। পরে আরেকজন নেতা তা সমর্থন করেন। সবার কণ্ঠভোটে সেটি পাস (অনুমোদন) হয়। একই প্রক্রিয়ায় সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচন করা হয়। পরে বাকি পদগুলোতে নেতাদের নাম ঘোষণা করেন দলের নব-নির্বাচিত সভাপতি। বেশিরভাগ সময় ৮১ সদস্যের কমিটিতে কিছু পদ খালি রাখা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে শূন্য পদগুলো পূরণ করা হয়।
আওয়ামী লীগের প্রয়োজনে ও কর্মীদের আবেগের কারণে আবারও সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা থাকছেন, সেটা একেবারে নিশ্চিত। নেতাদের ভাষ্য, মাঠের পরিস্থিতি ও সভাপতির সুনজরের ফলে ওবায়দুল কাদেরও যে দলটির সাধারণ সম্পাদক পদে থাকছেন, তাও প্রায় নিশ্চিত।
তবে নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ একাধিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা জানান, সামনে জাতীয় নির্বাচন। টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসা অবশ্যই একটি চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি করোনাভাইরাস মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে শক্ত হাতে সামাল দিয়ে পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে হবে আওয়ামী লীগকে। এজন্য নেতৃত্বে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। পাশাপাশি তার রানিংমেট হিসেবে সবপক্ষের সঙ্গে সুসমন্বয়ের জন্য দক্ষ, অভিজ্ঞ, পরিশ্রমী, কর্মঠ ও একে-অন্যকে খুব সহজেই বোঝেন- এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অনেকের বিবেচনায় ওবায়দুল কাদের এগিয়ে।
ওবায়দুল কাদেরের প্রতি ‘সন্তুষ্ট’ শেখ হাসিনাও
দলের রানিং মেট হিসেবে সাবেক ছাত্রনেতা ওবায়দুল কাদেরের প্রতি সন্তুষ্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় দক্ষভাবে সামাল দিচ্ছেন বলেও রীতিমতো ‘সার্টিফিকেট’ দিয়েই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন সময়ে বক্তৃতায় শেখ হাসিনার মুখে ওবায়দুল কাদেরের প্রশংসা শোনা গেছে।
গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে বঙ্গবন্ধু টানেলের একটি টিউবের কাজের সমাপ্তি উদযাপন অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন শেখ হাসিনা। সেখানে তার সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার একপর্যায়ে ওবায়দুল কাদেরের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের, তার মতো কর্মঠ লোক খুব কম আছে। তাকে পার্টির সেক্রেটারি করার পর আমার চাপ অনেক কমে গেছে।’
কাদেরও কি ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েছেন?
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাটট্রিক করতে যাচ্ছেন ওবায়দুল কাদের। এমন গুঞ্জন সবখানে। দলের নেতাকর্মীদের মুখে মুখে এখন এমন কথা শোনা যাচ্ছে। তবে এ নিয়ে আরও বেশি ‘আত্মবিশ্বাসী’ দেখা গেছে খোদ ওবায়দুল কাদেরকে। দলের সভা-সমাবেশে বক্তৃতাকালে তাকে শক্তভাবে কথা বলতে শোনা গেছে। তবে সর্বশেষ সম্মেলনের দুদিন আগে বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঞ্চ পরিদর্শনে গিয়ে তার পদে থাকার বিষয়ে আরও স্পষ্ট করে বক্তব্য দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি জানান, সম্মেলনের মাধ্যমে আগামীতে যে কমিটি আসছে, তাতে বড় কোনো পরিবর্তন করা হবে না। বরং জাতীয় নির্বাচনের পর আগাম একটি সম্মেলন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। তার এমন বক্তব্যের পর দলের নেতারা বলছেন, সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাটট্রিক দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়ে হয়তো ওবায়দুল কাদের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়ে গেছেন!
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কাদের বলেন, ‘সবার দৃষ্টি তো এখন দলের সাধারণ সম্পাদক পদের দিকে। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে এ পদে প্রার্থী হতে অনেকের ইচ্ছা থাকতে পারে। আমার জানামতে, এ পদে অন্তত ১০ জন অভিজ্ঞ ও যোগ্য প্রার্থী দলে আছেন। তবে কে হবেন, এটা নেত্রীর ইচ্ছা ও কাউন্সিলরদের মতামতের ওপর নির্ভর করছে। সবকিছুর প্রতিফলন ঘটবে দ্বিতীয় অধিবেশনে। কাজেই আমি কারও নাম বলতে পারবো না। তবে এবারের সম্মেলনে কমিটিতে তেমন বড় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রয়োজনে পরবর্তী সম্মেলন নির্বাচনের পর আগামও করতে পারি। তখন একটা বড় ধরনের পরিবর্তন হয়তো হবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, ধানমন্ডি, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা ও নেতাদের আড্ডায় চাওর আছে- ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রপতি হতে আগ্রহী। এজন্য তিনি নির্বাচনের পরে আগাম সম্মেলনের কথা বলছেন। বস্তুত আগাম সম্মেলন না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে নেত্রী তাকে (ওবায়দুল কাদের) যদি এ পদে রাখতেই চান এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি বানাতে বা সরিয়ে দিতে চান, তবে তার সঙ্গে যুগ্ম সম্পাদক এমন কাউকে দেবেন, যাতে সাধারণ সম্পাদকের অবর্তমানে তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে মেয়াদ শেষ করতে পারেন।
নজর সবার ‘প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক’ পদে
ওবায়দুল কাদেরের ওপর দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সন্তুষ্ট। শীর্ষ নেতারাও বলছেন- সব দিক বিবেচনায় উনি (কাদের) এগিয়ে। আবার কাউন্সিলরদের মনোভাবও ইতিবাচক। ফলে টানা তৃতীয় মেয়াদে ওবায়দুল কাদেরের দলের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া শুধুই সময়ের ব্যাপার মাত্র। শেষ পর্যন্ত যদি সেটাই হয়, তাহলে সবার দৃষ্টি থাকবে প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে।
কারণ রাষ্ট্রপতি হওয়া বা বয়স ও শারীরিক জটিলতায় পড়লে ওবায়দুল কাদেরের অবর্তমানে দায়িত্ব চালিয়ে নিয়ে যাওয়া লাগতে পারে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের। রীতি অনুযায়ী- দলের প্রথম বা সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়ে থাকেন। ফলে সাধারণ সম্পাদক পদে যোগ্য বা এ পদে আসতে আগ্রহীদের সবার দৃষ্টি এখন ‘প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক’ পদে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, ওবায়দুল কাদেরকে যদি সত্যিই এবারও সাধারণ সম্পাদক পদে রেখে দেওয়া হয়, তাহলে বর্তমান কমিটির প্রথম ও দ্বিতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনিকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হতে পারে। তাদের পদে আনা হতে পারে ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে। অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন হাছান মাহমুদ ও বাহাউদ্দিন নাছিম।
তারা আরও জানান, বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন অথবা মির্জা আজম হতে পারেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া সক্রিয় কয়েকজন সম্পাদক ও সদস্যের পদোন্নতি হতে পারে। বাদ পড়তে পারেন কয়েকজন। নতুন যুক্ত হবেন কিছু সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা-নেত্রী।
৭৪ বছরে আওয়ামী লীগের ছয় সভাপতি
দলটির প্রথম দিকে চারটি কাউন্সিলে (১৯৪৯-১৯৫৭) সভাপতি হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। ১৯৬৪ সালে পঞ্চম কাউন্সিলে আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে ষষ্ঠ কাউন্সিলে দলের সভাপতি হন শেখ মুজিবুর রহমান। টানা চার কাউন্সিলে সভাপতি হওয়া শেখ মুজিব ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত পদে ছিলেন। ১৯৭৪ সালে দশম কাউন্সিলে সভাপতি হন এ এইচ এম কামরুজ্জামান।
১৯৭৮ সালে একাদশ কাউন্সিলে সভাপতি হন আবদুল মালেক। দ্বাদশ কাউন্সিলেও তিনি বহাল থাকেন স্বপদে। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দলের ১৩তম কাউন্সিলে সভাপতি হন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ ২১তম কাউন্সিলেও তিনি একই পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ২২তম কাউন্সিলে নির্বাচিত হলে তিনি দশম বারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন।
২১ সম্মেলনে ৯ সাধারণ সম্পাদক
১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক। এরপর ১৯৫৩-১৯৬৬ সাল পর্যন্ত চারবার দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ঐতিহ্যবাহী এ দলটির দ্বিতীয় সাধারণ সম্পাদক। ১৯৬৬-১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। তিনি তৃতীয় সাধারণ সম্পাদক। এরপর ১৯৭২-১৯৭৬ সাল পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে জিল্লুর রহমান দলটির চতুর্থ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
একাদশ ও দ্বাদশ সম্মেলনে টানা দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক হন আবদুর রাজ্জাক। তিনি পঞ্চম সাধারণ সম্পাদক। ১৯৮৭ সালে ১৩তম সম্মেলনে আওয়ামী লীগের ষষ্ঠতম সাধারণ সম্পাদক হন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তিনি টানা দুই মেয়াদ ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এর ১৫ ও ১৬তম সম্মেলনে জিল্লুর রহমান আবারও দুই মেয়াদে ২০০২ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
২০০২ সালের ১৭তম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হন আবদুল জলিল। তিনি দায়িত্বে ছিলেন ২০০৯ সাল পর্যন্ত। ওইবছর দলের ১৮তম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন ২০১৬ সাল পর্যন্ত। ২০১৬ সালের ২০তম কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়ে দশম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। ২১তম সম্মেলনেও তিনিই আবারও দায়িত্ব পান। এবারের ২২তম সম্মেলনে দায়িত্ব পেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হ্যাট্রিক করবেন তিনি।
সারাদেশে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা শাখা। এরমধ্যে ৩৯টির সম্মেলন হয়েছে, বাকি ৩৯টির সম্মেলন হয়নি। সম্মেলন হওয়া ৩৯টির মধ্যে প্রায় সবকটিতেই সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা হয়েছে। এরমধ্যে নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে মাত্র সাতটিতে। নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়নি ২৪টিতে এবং নেতৃত্বের আংশিক পরিবর্তন হয়েছে আটটিতে। সেই হিসাবেও বলা যায়, এবার কেন্দ্রেও এ চিত্রের প্রতিফলন ঘটবে। তেমন বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না নেতৃত্বে।
প্রস্তুতি শেষ, মঞ্চে চেয়ার থাকবে ১২০টি
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ১১টি উপ-কমিটি কাজ করছে। প্রথা অনুযায়ী- সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও সদস্যসচিব সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলন সফল করতে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দফায় দফায় বৈঠক, দাওয়াতপত্র বিতরণ, গঠনতন্ত্র সংযোজন, বিয়োজন, ঘোষণাপত্র পরিমার্জন, মঞ্চ সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ প্রায় শেষ করেছেন। এবারের সম্মেলনের স্লোগান ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’।
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের মূল মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা মঞ্চ। মূল মঞ্চে চারটি সারিতে চেয়ার সাজানো হবে। প্রথম সারিতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন। দ্বিতীয়টিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র নেতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাকি দুটিতে বসবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সবমিলিয়ে ১২০টি চেয়ার রাখা হবে মঞ্চে।
আওয়ামী লীগের মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির সদস্যসচিব ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট বনাম ৪৪ ফুট মঞ্চ তৈরির কাজ শেষপর্যায়ে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে সাত ফুট। মূল মঞ্চে চার ভাগে চেয়ার সাজানো হবে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ এলইডি মনিটর থাকবে। তাতে সম্মেলনের কার্যক্রম দেখা যাবে।
বাজেট কমেছে, দাওয়াত পাননি বিদেশিরা
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব বাংলাদেশেও। অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এবারের সম্মেলন সাদামাটাভাবে করছে আওয়ামী লীগ। প্রথম থেকেই খরচ কমানোর তাগিদ দিয়ে আসছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। সেভাবেই মঞ্চ তৈরিসহ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ২০১৯ সালের সর্বশেষ সম্মেলনে বাজেট ছিল তিন কোটি ৪৩ লাখ। এবারের সম্মেলনে বাজেট তিন কোটি ১৩ লাখ। দলের জাতীয় কমিটি এ বাজেট অনুমোদন করেছে।
এদিকে, এবারের সম্মেলনে দাওয়াত দেওয়া হয়নি বিদেশিদেরও। তবে কেন্দ্রীয় ১৪ দল, জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্মেলনে দাওয়াত দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথম অধিবেশন
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসবেন। এরপর আধা ঘণ্টাব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। পরে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল অধিবেশন
প্রথম অধিবেশন শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন। এ অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন।