করোনার অতিমারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে তৈরি হয়েছে শিখন ঘাটতি। তাদের বেশির ভাগই গ্রাম, চর ও পাহাড়সহ দুর্গম অঞ্চলের। মূলত টেলিভিশন ও অনলাইনে পাঠদানে যুক্ত হতে না পারায় তারা ঠিক মতো শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেনি। এ কারণে এই শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আর যে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঘাটতিমুক্ত রয়েছে তারা শহর অঞ্চলের।
তবে বাড়তি যত্নে তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশের ঘাটতি কাটানো সম্ভব। এ জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) অতিরিক্ত ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, টেলিভিশনে পাঠদান এবং ইউটিউব ও অনলাইনে বিষয়ভিত্তিক ক্লাস আপলোড করার সুপারিশ করেছে।
বুধবার (২৭ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বেডু) এই শিখন ঘাটতি নিরূপণ করে আমাদের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। তারা কেবল অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ওপর গবেষণাটি করেছে। তবে আমরা অষ্টম শ্রেণির পাশাপাশি অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে পরিকল্পনা ও সুপারিশ করেছি।
জানা গেছে, গত শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার দফায় দাফায় বিশেষজ্ঞরা বৈঠক করে উল্লেখিত পরিকল্পনাটি তৈরি করেন। এরপর গত ২৪ জুলাই এটি প্রথমে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পরদিন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, করোনার কারণে আমাদের শিখন ঘাটতি হয়েছে। তবে কোথায় ঘাটতি হয়েছে, কী করতে হবে, তা নিয়ে এরই মধ্যে গবেষণা করেছে আমাদের বেডু। গবেষক ও শিক্ষাক্রমের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা কর্মশালা করেছেন, পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, এই ঘাটতি পূরণে আমরা দ্রুত কাজ শুরু করবো। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বৈঠক হবে। সেখান থেকে তারিখ চূড়ান্ত হবে। তবে সেটা আগামী মাস থেকেই শুরু হবে।
বেডুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিত বিষয়ে ৬৯ শতাংশের বিভিন্ন মাত্রায় শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এছাড়া বাংলায় ৮০ শতাংশ আর ইংরেজিতে ৭৬ শতাংশের ঘাটতি তৈরি হয়। এবার নবম শ্রেণিতে ও আগামী বছর দশম শ্রেণিতে অতিরিক্ত ক্লাস আর বিশেষ অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে তাদের এই ঘাটতি পূরণ করা হবে।
অন্যদিকে, ষষ্ঠ, সপ্তম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু বেডু এ নিয়ে গবেষণা করেনি। এ কারণে এনসিটিবি চায় ‘ডায়াগনস্টিক টেস্ট’ এর মাধ্যমে বর্তমানে অধ্যয়নরত সপ্তম, অষ্টম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ঘাটতি নির্ণয় করতে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এটি বের করার সুপারিশ আছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে।