করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত হলেও ফের মহামারির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবক সবার মধ্যেই প্রশ্ন করোনার মধ্যে আসলেই কি স্কুল-কলেজ খুলছে? সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও পর্যন্ত জানা নেই সরকারের দুই মন্ত্রণালয়ের।
আগামী ৩০ মার্চের আগে করোনার পুরো পরিস্থিতি দেখে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। তবে সেজন্য অন্তত অপেক্ষা করতে হবে আরও এক সপ্তাহ। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর ১৮ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই সময়ে অনলাইনে এবং সংসদ টিভিতে শ্রেণি কার্যক্রম চালু রাখে সরকার।
তবে করোনা সংক্রমণ কমে আসায় আগামী ৩০ মার্চ স্কুল-কলেজ এবং ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি নির্দেশনার আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুতিরও নির্দেশ দিয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত ২২ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে জানান, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ঈদ-উল-ফিতরের পর ২৪ মে থেকে শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ১৭ মে থেকে খুলে দেওয়া হবে। হল খুলে দেবার আগেই আবাসিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকেই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরপর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী জানান, আগামী ৩০ মার্চ থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের দ্বাদশ, মাধ্যমিক পর্যায়ে দশম এবং প্রাথমিক পর্যায়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন (সপ্তাহে ছয় দিন) ক্লাস হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন ক্লাস হবে। নবম এবং একাদশ শ্রেণির সপ্তাহে দুই দিন করে ক্লাস হবে। তারপর পরিস্থিতির আরও উন্নতি হলে একটু একটু করে বাড়িয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় শতভাগ ক্লাস চালু হবে।
এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় করোনা সংক্রমণও কম ছিল। ২২ ফেব্রুয়ারি শনাক্ত হন ৩৬৬ জন। ওই দিন মৃত্যু হয় সাত জনের। আর ২৭ ফেব্রুয়ারি শনাক্ত হন ৪০৭ জন এবং পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। তবে মার্চে এসে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সবশেষ শনিবার (২০ মার্চ) শনাক্তের সংখ্যা ১ হাজার ৮৬৮ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের।
সংক্রমণের মধ্যে নতুন করে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যেও দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার কারণে সরকারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঘোষিত তারিখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করেছে। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ও পাশাপাশি নতুন বা পরিবর্তিত রূপের আবির্ভাবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। শহরাঞ্চলে বেশিরভাগ অভিভাবককে সন্তান নিয়ে গণপরিবহন বা রিকশায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে হয়। যুবকদের আক্রান্তের হার আগের চেয়ে বেড়েছে। শিশুদের হার কম হলেও তারা ভাইরাস-বাহকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে।
এই অবস্থায় অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাবেন না দাবি করে জিয়াউল কবির দুলু বলেন, আমাদের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী এবং অভিভাবকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই নতুনভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির ওপরই মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নির্ভর করছে। তবে সেটি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত আসবে। তবে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারে বলেও আভাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আবার বাড়ছে কিনা তা ২৫ মার্চের দিকে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। কারণ করোনা পরিস্থিতির সেই সময়ের ওপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাশাপাশি মুজিববর্ষের দশ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য কেউ করতে চাননি।