বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও আবাসিক হলে থাকতেন। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে, মিছিল-মিটিংয়ে ছিলেন সামনের সারিতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেসব ছবি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন শিক্ষকের সঙ্গে তার ছবিও রয়েছে সেখানে। নানা সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে অংশও নিয়েছেন। কিছুদিন আগে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন করে প্রশাসন। এতে তিনি অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। পরে জানা গেল, অন্যের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেজে তিনি এসব করে বেড়াতেন।
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। ওই ভুয়া শিক্ষার্থীর নাম মফিজুর রহমান ওরফে রাফি। অনেকে তার এই নামকেও ভুয়া বলে সন্দেহ করছেন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাফিজুর রহমানের পরিচয়পত্র ব্যবহার করতেন। মাফিজুর রহমান ১৯তম ব্যাচের কৃষি অনুষদের সি গ্রুপের শিক্ষার্থী। তার আইডি নম্বর: ১৯০১৩১৯। তাদের দুজনের নাম এত কাছাকাছি হওয়ায় বিষয়টি প্রায় চার বছর ধরে বোঝা যায়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভর্তির সময়ে মাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্র হিসেবে জিয়া হল (ডরমিটরি-২) বরাদ্দ পান। তবে তার বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে হওয়ায় তিনি হলে থাকতেন না। বাড়ি থেকেই ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন। এই সুযোগে তার স্টুডেন্ট আইডি ব্যবহার করে মফিজুর সেখানে থাকতেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তঃহল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ১৯তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী সে খেলায় নিবন্ধন করতে গিয়ে দেখেন মফিজুরও নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু তার আইডি নম্বর তার পরিচিত একজনের সঙ্গে মিলে গেছে। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে ওই ছাত্র স্টুডেন্ট আইডির প্রকৃত মালিক মাফিজুর রহমানকে বিষয়টি জানান। পরে মাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও ছাত্র পরামর্শ অফিসে গত বৃহস্পতিবার লিখিত অভিযোগ দেন।
মুঠোফোনে মাফিজুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বন্ধুর কাছে জানতে পেরে খোঁজ নিয়ে দেখি, মফিজুর রহমান রাফি নামের কোনো শিক্ষার্থী নেই। স্যাররাও খোঁজ নিয়ে ওই নামের কাউকে পাননি। পরে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করি। আমি জানি না সে আমার আইডি ব্যবহার করে আরও কোনো অপরাধ করেছে কি না?
ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে মফিজুর রহমান ওরফে রাফি আত্মগোপন করেছেন। মুঠোফোনটিও বন্ধ রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কৃষি অনুষদে এ, বি, সি—তিনটি সেকশন আছে। প্রতি সেকশনে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৩০-১৫০ জন। এ সেকশনের শিক্ষার্থীরা জানতেন, মফিজুর বি সেকশনের ছাত্র আবার বি সেকশনের শিক্ষার্থীরা জানতেন মফিজুর সি সেকশনের ছাত্র। তবে কেউই তাকে ক্লাস করতে দেখেনি। ক্লাস করার কথা বললে মফিজুর বলতেন, ক্লাস করতে তার ভালো লাগে না। তাই ক্লাসে যান না। শুধু পরীক্ষায় অংশ নেন।
কৃষি অনুষদের ডিন রওশন আরা ঢাকা মেইলকে বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে প্রক্টরের সঙ্গে কথা হয়েছে। সব শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
মফিজুর রাফি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডরমিটরি-২ (জিয়া হল) আবাসিক হলে থাকতেন। ডরমিটরি-২ আবাসিক হলের হল সুপার আবু সাঈদ বলেন, এ বিষয়ে তারা তদন্ত শুরু করেছেন।
প্রক্টর মামুনুর রশিদ ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রকৃত ঘটনা জানতে তারা কাজ করছেন। তারা অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন।
কৃষি অনুষদের আরেক শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর ড. ইয়াসিন প্রধান ঢাকা মেইলকে বলেন, ওই শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে নেই, বাইরে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে। দ্রুততম সময়ে বিষয়টি জানা যাবে।