শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর আগে তাদের করোনার টিকা দেওয়া হবে- অনেকটা ভাটা পড়েছে সরকারের নেওয়া এই উদ্যোগটিতে। দুই মাসের ব্যবধানে সব শিক্ষক-কর্মচারী টিকা পাবে কি-না তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। আর দেশের ২২০টি আবাসিক হলের এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর টিকা পাওয়া যেন এখন স্বপ্নের মত হয়ে গেছে।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচ হাজারের মতো শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছেন। সেই হিসাবে ‘ক্লাসে ফেরানোর আগে সবাইকে সুরক্ষিত করা হবে’ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির এ আশ্বাস ভেস্তে যেতে বসেছে। সর্বশেষ কতজন শিক্ষক-কর্মচারী টিকা নিয়েছে সে হিসাব প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকলেও মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কতজন শিক্ষক টিকা নিয়েছেন তারা কোনো তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে নেই।
শুধু সরকারি শিক্ষক-কর্মচারী নয়, করোনার ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা দেশের ৬০ হাজার কিন্ডার গার্টেনের প্রায় ১২ লাখ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের। এ ক্যাটাগরিতে শেষ পর্যন্ত কতজন টিকা পেয়েছেন তারও কোনো তথ্য নেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ও ইউজিসির কাছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে করোনা বৃদ্ধিতে ভারত টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি, শুরু থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত মনিটরিং না করা, ঘোষিত ২৩ মে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে অনিশ্চয়তার কারণে টিকা কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের টিকার তথ্য আমাদের কাছে আপডেট নাই। কয়েকটি জেলায় কথা বলে দেখেছি, তারা যে তালিকায় পেয়েছিল তাদের টিকা দেওয়া হয়েছে। তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে সমস্যা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর সবাইকে টিকা দিতে পারিনি। কারণ সবার এনআইডি নাই। কতজন শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছে সে তথ্য আমার কাছে এই মুহূর্তে নেই।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর থেকে সারাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকা কার্যক্রমের মনিটরিং করা হয়। কতজন শিক্ষক টিকা নিয়েছে তার তথ্য চেয়ে এপ্রিল মাসে শুরুতে দেশের ৯টি আঞ্চলিক অফিসে চিঠি দিলেও সে তথ্য এখন পর্যন্ত পায়নি দফতরটি । ফলে তারা আদৗ জানে না কতজন শিক্ষক টিকার আওতায় এসেছে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের উপ পরিচালক (প্রশাসন) মো. রুহুর মমিন বলেন, ৯টি আঞ্চলিক অফিসে চিঠি দিয়ে তথ্য চেয়েছি। কিন্তু এখনও পাইনি। পেলে বলতে পারব।
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে দুটি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, দেশের সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে সরাসরি ক্লাস শুরু হবে ঈদুল ফিতরের পর আগামী ২৪ মে থেকে। তার এক সপ্তাহ আগে ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে। তার আগে অবশ্যই করোনা টিকা নিতে হবে। হল খোলার আগেই আবাসিক শিক্ষার্থী, আবাসিক হলের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টিকার ব্যবস্থা করা হবে। তবে কারও যদি স্বাস্থ্যগত (মেডিকেল কারণে) কারণে টিকা না নেওয়ার মতো অবস্থা থাকে, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হবে। অর্থাৎ, তারা হলে থাকতে পারবেন।
বর্তমানে দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকর আছে। এছাড়া অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১০৭টি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট ২২০টি আবাসিক হল আছে। যেখানে অবস্থান করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকের বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় তাদের এনআইডি নেই। ফলে টিকা নিবন্ধের জটিলতায় পরেছেন তারা। এছাড়া বর্তমানে প্রথম ডোজ নেওয়ার হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে ১৭ লাখ টিকার সংকট রয়েছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান বলেন, সর্বশেষ কতজন শিক্ষার্থীরা টিকা নিয়েছেন তার সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অফিশিয়ালি আমাদের জানায়নি। পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিকা দিচ্ছে। সরকার শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেবে। শিক্ষকদের ৯০ শতাংশ প্রথম ডোজ দেওয়া শেষ হয়েছে।
আর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক স্কুলে তিন লাখ ৬৮ হাজার ৪২২ জনের মধ্যে দুই লাখ ৫৯ হাজার ৪৯৫ জন টিকা নিয়েছে। এরমধ্যে গর্ভবতীসহ টিকার আওতায় না এরকম ব্যক্তিও রয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রাথমিকের ৭১ শতাংশ টিকা নেওয়া শেষ।
অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন ৭ লাখ ৩০ হাজারের মতো। এরমধ্যে ৪০ বছরের কম বয়সী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন ২ লাখ ৬৫ হাজার ৪২৬ জন।